ডিবিএন ডেস্কঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন। গতকাল সোমবার (১৫ আগস্ট) অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কানাডা বাংলাদেশের অত্যন্ত বন্ধু-প্রতিম একটি দেশ। গত একান্ন বছর যাবৎ দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করে চলেছে। দুটি দেশের সম্পর্কও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের ১৮ সদস্য, যাদের মধ্যে শিশু, একজন সন্তানসম্ভবা নারী, অন্যান্য নারী ও প্রবীণ নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান খুনি নূর চৌধুরী বিগত ২৬ বছর ধরে কানাডায় আশ্রয় পেয়ে আসছে। কানাডা এমনই একটি দেশ যেটি মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কিন্তু ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য এই সুনির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে নূর চৌধুরীর মতো একজন জঘন্য ও সাজাপ্রাপ্ত খুনির তথাকথিত অধিকার তার অপরাধের শিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারগুলোর ওপর প্রাধান্য পেয়েছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপারটা হলো কানাডার ইমিগ্রেশন বোর্ডে এই জঘন্য খুনির অপরাধকে “মানবতা বিরোধী অপরাধ” বলে অভিহিত করার পরও এই জঘন্য দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম খুনি নূর চৌধুরী বিগত ২৬ বছর ধরে কানাডায় আশ্রয় পেয়ে আসছে। কানাডায় বসবাসকারী সবার এই জঘন্য খুনির চরম মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিষয়ে সম্যক অবহিত হওয়া প্রয়োজন। সবার জানা উচিত যে, কীভাবে মানুষের ন্যায্য বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়ে বিগত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন জঘন্য সাজাপ্রাপ্ত খুনি এই চমৎকার দেশ কানাডায় নির্বিঘ্নে আশ্রয় ও সুরক্ষা পেয়ে আসছে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘তারপরেও আমরা সবাই জানি কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। বিশ্বের মধ্যে কানাডা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বন্ধু রাষ্ট্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কানাডার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যু যেমন: বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জলবায়ু সংকট, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি কানাডার সহযোগিতা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
এছাড়া, ২০২১ সালের পর থেকে দুই বন্ধু-প্রতিম দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হয়েছে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে একটি বিমান পরিষেবা চুক্তি সই হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ঢাকা ও টরেন্টোর মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে যাতে করে মানুষে মানুষে যোগাযোগ, ব্যবসা-বিনিয়োগের সম্প্রসারণ বাড়বে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। স্টুডেন্ট ডাইরেক্ট স্ট্রিমে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি, অটোয়ার কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের চ্যানসারি নির্মাণের জন্য কানাডার জমি লিজ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে আরও গতিশীল করেছে। এসব বিষয়ে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য আমরা কানাডার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সবকিছুর পরও জঘন্য ও সাজাপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর বিষয়টা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে একটি অমীমাংসিত বিষয় হিসেবে বিরাজমান রয়েছে। কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন সাজাপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাব্য সব বাধা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় বিশ্বাসী। হাইকমিশন জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে করে সম্ভাব্য সব পর্যায়ে কীভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়া যায় এবং এই জঘন্য খুনির বিচারের রায় কার্যকর করে জাতির সবচেয়ে কলঙ্কজনক খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়। জঘন্যতম খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে হাইকমিশন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং অতি অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করে সেভাবে কাজ করছে এবং কাজ করে যাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এটি পরিষ্কারভাবে বলা প্রয়োজন যে, হাইকমিশন জঘন্য ও সাজাপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে। হাইকমিশন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে যাতে তারা খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তাদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মানবিক ভূমিকা রাখে।
এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, বিগত সরকারের আমলগুলোতে কানাডা সরকার খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে চাইলেও তদানিন্তন সরকারগুলো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বা আগ্রহ দেখায়নি।
পরিশেষে, হাইকমিশন কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
ডঃ খলিলুর রহমান, পিএইচডি
বাংলাদেশ হাইকমিশনার, অটোয়া, কানাডা।