তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লোকোৎসব হচ্ছে চড়কপূজা। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আকর্ষণীয় ও অন্যতম লোকোৎসব এটি। প্রতিবছর এদিনে বাংলা পহেলা বৈশাখে ছয়চিরি সাগরদীঘির পাড়ে এ চড়কপূজা ও মেলার আয়োজন করা হয়। এ পূজার অন্য নাম নীলপূজা, মহাদেবপূজা, গম্ভীরাপূজা বা শিবের পূজা।
কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি সাগরদীঘির পাড় চড়কপূজার জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। এখানে প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গত ১৪ এপ্রিল দুপুর থেকে এ পূজায় নারী-পুরুষ দর্শনার্থীদের বিশাল সমাগম ঘটে। ভক্ত মণ্ডলীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের উপস্থিতি ঘটে। বিশাল এক দা দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য পরিবেশন করে। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক ছয়চিরি দীঘিতে স্নান করিয়ে ভক্তদের লৌহদণ্ড ও শিকল শরীরের বিভিন্ন অংশে গেঁথে দেওয়া হয়।
বিশেষ করে লৌহদণ্ড জিহ্বা ও গলায় গেঁথে দেওয়া হয়। এরপর নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জ্যান্ত মানুষের) পিঠে লোহার দুটি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। এ সময় অনেকে বাতাসা আর কলা ওপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।
চড়কপূজা উদযাপন কমিটির নেতা অনুরুদ্ধ প্রসাদ রায় চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে ২ বছর চড়ক পূজা বন্ধ ছিল। এই বছর চড়ক পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা আলাপ-আলোচনা করে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তিনি পূজা ও মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। কমলগঞ্জের যেসব এলাকায় সাধারণত দেবনাথ, শব্দকর, মালাকার ও চা-শ্রমিক সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন, সেখানেই আয়োজিত হয় এই চড়কপূজা। যেমন কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের যোগীবিল গ্রামে চৈত্রের ২৪ ও ২৫ তারিখে আয়োজিত হয় চড়কপূজা। এর তিন দিন পর আয়োজন করা হয় শ্রীনাথপুর গ্রামে।
পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগান এবং রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়শ্রী (ছয়চিরি) গ্রামে। তাছাড়া কমলগঞ্জের আরও বেশ কয়েকটি স্থানে চড়কপূজা হয়। প্রতিটি জায়গায় চড়কপূজাকে ঘিরেই বসে রকমারি পণ্যের মেলা ও নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের দোকান। তবে বিশেষ করে ছয়চিরি দীঘিরপাড়ের মেলাটি বেশ বড় আকারের হয়। মেলায় হরেক রকমের সামগ্রী নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। মাটির পাত্র, হস্তশিল্প, কাঠের তৈরি নানান সামগ্রী, মুড়ি-মুড়কি, মিঠাই ও শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ প্রায় সবই পাওয়া যায় মেলায়।
চৈত্রসংক্রান্তি ও বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখে এ মেলা হওয়ায় এই দিনে কমলগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।