চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের ডাঃ নাহিদ সিরাজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। নামে সরকারি হাসপাতালে চাকুরি করে কিন্তু চাকুরীতে ডিউটিরত অবস্থায়ও ভিজিটের বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করেন বেসরকারি ক্লিনিকে।
গতকাল শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর এমনটি অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের ডাঃ নাহিদ সিরাজ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় গতকাল শনিবার ডাঃ নাহিদ সিরাজের হাসপাতালে দুপুর দুইটার পরে ডিউটি ছিলো। কিন্তু তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকায় সময়মত হাসপাতালে ডিউটি করেন নাই। হাসপাতালে ডিউটি চলাকালীন বারবারই প্রাইভেট ক্লিনিকে ২০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখে আসায় হলো তার কাজ। একেতো ডাক্তার সংকট, আবার ইচ্ছা করে সম্পূর্ণ ডিউটি টাইম দায়িত্ব পালন না করা। এসব মিলে রোগীরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। আবার প্রত্যেক ডাক্তারই তাদের সকালের ডিউটি দুপুর দুইটা পর্যন্ত থাকলেও তারা দুপুর একটা বাজতে না বাজতেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন। কিন্তু সব মূলে তথ্য নিয়ে দেখা যায় প্রাইভেট ক্লিনিকে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখায় প্রধান। কোনো কোনো রোগীর অভিযোগ এখানকার ডাক্তার রোগীকে প্রাইভেট চেম্বারে যাবার পরামর্শ দিয়েও থাকেন।
এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ডাঃ নাহিদ সিরাজের নিকট রিপোর্ট লেখাকালীন মুঠোফনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অবশেষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টি এস ডাঃ মাসুদ রানার নিকট ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, নাহিদ সাহেবের গতদিনের ডিউটির বিষয়ে আমি তো জানিনা। আমি এখন শুনলাম এই বিষয়ে তাকে আগামিকাল জিজ্ঞাসা করবো।
তবে সাধারণের ভাষ্য হাসপাতাল প্রধানের কাছে অভিযোগ আনলেই তিনি ডাক্তার সংকটের কথা বলেন। কিন্তু যে চারজন ডাক্তার আছেন তারা যদি তাদের ডিউটি টাইম পুরাটায় হাসপাতালে না থেকে এবং বারবার প্রাইভেট ক্লিনিকে ভিজিটের বিনিময় রোগী দেখতে যায় তাহলে হাসপাতালে বর্তমানে যে রোগীর ভিড় তাদের কি অবস্থা হবে।
উল্লেখ্য গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট ৩৫-৪০ জন ডেঙ্গু রোগী এই হাসাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। দিন দিন নতুন নতুন ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। অনেকে সামন্য জ্বর হলেও ডেঙ্গুর ভয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন। ডেঙ্গু রোগী ছাড়াও শত শত জ্বরের রোগী এসে ভিড় জমাচ্ছে হাসপাতালে।
সরেজমিনে গতকাল সন্ধায় হাসপাতালটিতে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডের রোগী তুলনা মূলক কম আছে, তবে শিশু ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডের বেড ও মেঝেতে কোন প্রকার জায়গা খালি নেয়। শিশু ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার এবং মহিলা ওয়ার্ডের কোন একটু মেঝে একটু দাঁড়ানোর বিন্দু পরিমানে জায়গা খালি নাই।
গরমে রোগী সহ সাধারণ মানুষের জিবন যেনো যায় যায়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক সিনিয়ার নার্স বলেন, রোগীর চাপে মেঝেতে এক বিন্দু জায়গাও নাই, কতো জন রোগী এই মেঝেতে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দুই জন নার্সের দ্বায়িত্বে ষাট জন রোগী আছে। তবে রাত্রে আরো রোগী বাড়তে পারে।
তবে জরুরী বিভাগ থেকে জানা যায়, হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবাই মডেল হবার কারণে শুধু মাত্র চৌগাছা উপজেলার রোগী নয় পাশের উপজেলা মহেশপুর, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার রোগীরা চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন।
এমতাবস্থায় হাসপাতালের ডাক্তার-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ। অনেকের অভিযোগ এমনিতে রোগী মাত্রারিক্ত বেশি হবার কারণে চিকিৎসক ও নার্স সংকট, আবার ডাক্তারদের দায়িত্বহীনতার কারণে রোগীদের অবস্থা চরমে পৌছে যাচ্ছে। সারাবছর হাসপাতাল নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকা সত্বেও উপরমহল কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে সাধারণের ধারণা। তিনারাতো টাকার নেশায় আছেন আর আমরা সাধারণেরা প্রাণ নিয়ে সংশয়ে আছি।