আব্দুল আলীম, চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাপান অর্থাৎ জাইকার অর্থায়নে, এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের বাস্তবায়নে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডি প্রোগ্রামের সহযোগিতায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শিক্ষকদের ভূমিকা সম্পর্কিত ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হয়।
আজ বুধবার ৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১ টায় উপজেলার সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধূলিয়ানীর প্রধান শিক্ষক এমএম মহব্বত আলীর সভাপতিত্বে ও এনসিডি প্রোগ্রামের চৌগাছা উপজেলা সুপারভাইজার শাহিনুর রহমান শাহিন, চৌগাছা এবং যশোর সদর উপজেলার হেলথ কেয়ার সুপারভাইজার মোফাজ্জেল হোসেন লিটনের পরিচালনায় বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এই ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হয়।
ওরিয়েন্টেশনের প্রথমেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চতা, ওজন, কোমর এবং ব্লাড প্রেসার পরিমাপের কাজ সম্পন্ন হয়। এরপরই কোরআন তেলাওয়াত এবং বিদ্যালয়ের প্রধান স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রধান আলোচক হিসাবে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আলোচনা করেন হেলথ কেয়ার সুপারভাইজার মোফাজ্জেল হোসেন লিটন। আলোচনার শুরুতে তিনি এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের পরিচিতি, কর্মএলাকা, প্রধান কার্যক্রম, পানি প্রকল্প, আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরপরই ধারাবাহিকভাবে তিনি অসংক্রামক রোগ ও তার প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং শিক্ষকদেরকে অনুরুপভাবে শ্রেণিকক্ষে এসম্পর্কে আলোচনা করে সচেতন করে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি আলোচনায় তুলে ধরেন বাংলাদেশ সরকার কেনো অসংক্রামক রোগ নিয়ে এত কিছু করছে। কারণটা এমনই যে, বিশেষ করে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগ বেশি হয়ে থাকে। তথ্য সূত্রে জানা যায় এই দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগীর পরিমাণ ৮০%। তন্মধ্যে বাংলাদেশে এটি ৬৮% দেখা যায়। তিনি বিশেষ করে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ৪ টি কারণকে (রিক্স ফ্যাক্টর) উল্লেখ করে তা থেকে সচেতন থাকার আহবান জানান। কারণ চারটি হলো- ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম না করা, তামাকজাত দ্রব্যে আসক্ত এবং আর্সেনিক দূষণ।
প্রথম নং রিক্স ফ্যাক্টর ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস দূর করতে আমাদের সময়মত খাওয়া, সকালে বেশি খাওয়া, দুপুরে মধ্যম পরিমান খাওয়া, রাতে কম পরিমাণ খাওয়া, রাতে (৭-৮) টার ভিতর খেয়ে দুই ঘন্টা পরে ঘুমানো, লবণ কম খাওয়া (জনপ্রতি প্রতিদিন ৫ গ্রাম), লবণ যুক্ত মসলা পরিহার করা, তেল-চর্বি ও তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা, লালচে গোশতো কম খাওয়া, শাকসবজি বেশি খাওয়া, ভাত কম খেয়ে ফলমূল বেশি খাওয়া, দেশীয় ফলমূল বাড়িতে লাগিয়ে খাওয়া, কোমল পানীয় থেকে বিরত থাকা, বাচ্চাদের ফাস্ট ফুড খেতে নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনাসহ সচেতন করেন।
তিনি আরও বলেন ধুমপান পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া আর্সেনিক দূষণ থেকে বাঁচতে হলে বছরে দুই বার আর্সেনিক পরীক্ষা করতে হবে। তবে শুধু শিক্ষকগণ নিজেরাই সচেতন থাকবেন এটায় কাম্য নয়। বরং বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালীন শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য সময় সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন- পথে-ঘাটে, দোকান পাটে, যেখানেই সম্ভব মানুষকে এই অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করবেন। তবেই সকলকে বোঝাতে সম্ভব হবে।