চুল কমবেশি সবারই পড়ে। হয়তো কারও কম, কারও বেশি। নারী-পুরুষ সবাই চুলপড়া সমস্যায় ভোগেন। অতিরিক্ত চুল পড়া সত্যিই চিন্তার বিষয়। চুল পড়তে পড়তে অনেকের মাথায় টাক পড়ে যায়। ঘরোয়া উপায়েই চুল পড়া বন্ধ করা যায়।
দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে এর বেশি হলেই তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার চুল পড়া নিয়ে বেশি চিন্তা করলেও চুল পড়ে বেশি। চুল একরকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি যার নাম হল ক্যারাটিন। ৯৭ শতাংশ প্রোটিন ও ৩ শতাংশ পানি রয়েছে চুলে।
চুলের যেটুকু আমরা দেখতে পাই সেটি মূলত মৃত কোষ। নানা কারণেই চুলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই চুল পড়ার কারণ জানতে হবে। সেই সাথে চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলের গোড়া মজবুত রাখার জন্য নিয়মিত বেশ কিছু যত্ন নেওয়াও কিন্তু আবশ্যক।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক যদি আপনি অতিরিক্ত টেনশন করেন, পুষ্টির অভাবে ভোগেন ও প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা না ঘুমান।
চুল পড়া বন্ধ করতে নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুম এর পাশাপাশি নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া ও শরীরচর্চাও কিন্তু খুব জরুরি।
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কী করবেন-
১. প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত নারিকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এরপর সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
২. অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে চুলে ১ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুল পড়া কমাবে ও মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করবে।
৩. ডিমের কুসুমের সঙ্গে সামান্য অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ১ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। এটি চুল পড়া তো বন্ধ করবেই সাথে চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
৪. অলিভ অয়েল চুলে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
৫. পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। এরপর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
পুরুষের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ।ছেলেদের চুল পড়া
বন্ধ করার উপায়
মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের চুল পড়ে অতি দ্রুত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ পুরুষ ৫০ বছরের পূর্বেই টাক হয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে ২০-৩০ বছরের যুবকরাও অতি দ্রুত চুল হারাচ্ছে। তাই, ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রয়োজন এবং পাশাপাশি ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া সমাধানও রাখতে হবে হাতের কাছে।
একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, যদি আপনার মাথায় টাক পরে গিয়ে থাকে তাহলে প্রকৃতিগতভাবে আর সেখানে নতুন চুল গজানো সম্ভব নয়। তবে অবশিষ্ট চুল পরিস্কার এবং ঘন করার মাধ্যমে আপনার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব।
হালকা শ্যাম্পুর ব্যবহার
ছেলেদের চুল পড়া ও ঘন করার উপায় হিসেবে প্রচলিত অনেক লেখা ইন্টারনেটে পাবেন। কিন্তু ছেলেদের শ্যাম্পুর ব্যবহার নিয়ে খুব একটা কথা বলা হয় না। অথচ ভারী উপাদানের শ্যাম্পু চুলকে রূক্ষ করার পাশাপাশি মাথার ত্বককে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। তাই ছেলেদের সর্বদা হালকা ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে ও চুল ঘন হতে শুরু করবে।
রাসয়নিক পদার্থ ব্যবহার বর্জন করা
ছেলেদের মধ্যে রাসয়নিক পদার্থের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। তাই অল্প বয়সের মধ্যেই অনেক ছেলে মাথায় টাক নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এই বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্য সে নিজেই দায়ী। তাই ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করায় উপায় হিসেবে অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে, জমকালো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে বাজারের ক্ষতিকারক ক্যামিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুনঃ সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। অল্প বয়সে মাথায় টাক নিয়ে ঘুড়ে বেড়ানো কখনোই সুখের নয়। তাই আপনার সুস্বাস্থ্য আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। যেকোন ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করায় উপায় হিসেবে সুস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ন।
ধুমপান বর্জন
ধুমপানের সাথে পুরুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারনা করা হয়। বাংলাদেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্ত এবং অপরিনত বয়সের পুরুষ। ধূমপান চুল এবং মাথার ত্বকের অত্যধিক ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় ব্যবহার করেও অনেকেই আশানরুপ ফল পায় না তার কারন তারা ধূমপান বর্জন করতে পারছেন না। সুস্থ সুন্দর চুল নিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আজই ধূমপান বর্জন করুন।
হেয়ার প্যাক ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় হিসেবে ঘরে তৈরী বিশেষ হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারে ছেলেরা। হেয়ার প্যাকটি তৈরী করার পদ্ধতি- একটি বাটিতে ১ চামচ মধু, পাঁচ ফোঁটা রোজমেরি তেল, একটি ডিমের কুসুম এবং সাথে অ্যাভোকাডো পেষ্ট নিয়ে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। চুলে সামান্য পরিমাণ পানি স্প্রে করে হেয়ার প্যাকটি ভালোমত সম্পূর্ণ চলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত মালিশ করুন এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ভালো মতো ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত চেক-আপ
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায় হিসেবে ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। অনেকক্ষেত্রে মাথার ত্বকে বিশেষ কিছু রোগের আক্রমনের কারনে চুল পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে, ঘরোয়া সমাধান কাজ না করতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
নারীর চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ।মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ
করার উপায়
বাঙ্গালী নারীর চুলের সৌন্দর্য যেন এক ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার। ঐতিহাসিক গদ্য পদ্য থেকে জানা যায় সেই শুরুর সময় থেকেই নারীরা রেশমি ঘন কালো লম্বা চুলের জন্য কত কি করতো। বর্তমানে ফ্যাশন সচেতন পুরুষরাও লম্বা চুল রাখছে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া, প্রতিদিনের ধুলা দূষন যেন বাড়ন্ত চুলের দুষমনে পরিনত হয়েছে। চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, মাথার ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া আরো নানা ধরনের চুলের রোগ এখন নারী-পুরুষের নিত্য সঙ্গী।
চুলের যত্ন নেওয়ার সময়ও এখন কমে এসেছে সকলের কাছে। এই অবস্থায় সহজ এবং কার্যকরী ঘরোয়া চুল লম্বা করার উপায় সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য। আসলে চুল লম্বা করা বলতে বুঝায় চুলের সঠিক পরিচর্যা করে চুলের ক্ষতিহ্রাস করা ও চুলের বৃদ্ধি বজায় রাখা। রাতারাতি চুলের বৃদ্ধি সম্ভব নয়, তার জন্য চাই সঠিক যত্ন এবং ধৈর্য। এই লেখাটিতে আপনাকে কিছু ঘরোয়া চুল লম্বা করার উপায় জানাবো যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সঠিক উপায়ে চুলের পরিচর্যা করা চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবেন।
প্রথমেই আপনার অভ্যাসগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কারন, চুলের ক্ষতি সাধনের পিছনে আপনার কিছু বদ অভ্যাস জড়িত থাকতে পারে পাশাপাশি চুল লম্বা করার উপায় প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা এবং পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম শরীর সুস্থ রাখবে। সুষম খাবারের পরিমান বাড়িয়ে জাঙ্ক ফুড গ্রহন কমাতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে শ্যাম্পু করবেন।
অতিরিক্ত রোদের তাপে চুল পুড়াবেন না। প্রয়োজনে মাথা ঢেকে রাখুন। গরম পানি দিয়ে চুল পরিস্কার করবেন না। উচ্চ মাত্রার ক্যামিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ধুমপান বর্জন করুন।
নিয়মিত তেলের ম্যাসাজ
পুরো আর্টিকেল জুড়েই তেলের ম্যাসাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত তেলের ম্যাসাজ আপনার চুলের সুস্বাস্থ্য বজার রেখে চুলকে বাড়তে সাহায্য করবে। চুল পড়া বন্ধ হোক বা চুল লম্বা করার উপায় তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেল, বাদাম তেল অথবা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী
ক্যাষ্টর অয়েল- ক্যাষ্টর অয়েলকে চুলের মহৌষধ বলা হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন ই ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্যাটি এসিড যা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুলের ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে। চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে আপনি ক্যাষ্টর অয়েলের সাথে নারিকেল তেল/ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত তিন বার ব্যবহার করুন দেখবেন আপনার চুল বাড়তে শুরু করেছে। এটি চুল লম্বা করার জন্য সহজ এবং কার্যকরী উপায়।
বিশেষ হেয়ার প্যাক
চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে খুব ভালো কিছু ভেষজ হেয়ার প্যাক রয়েছে। এসব ঘরোয়া ভাবেই ঝটপট তৈরী করে নেওয়া সম্ভব। এছাড়া এর ব্যবহার বিধিও খুব সহজ।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় ডিমের ভূমিকা অকল্পনীয়। চুল লম্বা করার উপায় হিসেবেও ডিমের ব্যবহার রয়েছে। ডিমের প্রোটিন, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, সালফার ইত্যাদি উপাদান চুলের জন্য কতটা প্রয়োজন সেটা হয়তো ডিম নিজেও উপলব্ধি করতে পারে না। ডিমের সাথে টক দই, মেথি, পাকা কলা মিশিয়ে একটি প্রোটিন হেয়ার প্যাক বানানো যায়। ত্রিফলা নামে পরিচিত আমলকী, হরীতকী, বহেরার সাথে টকদই মিশিয়ে তৈরীকৃত একটি হেয়ার প্যাক খুবই সুপরিচিত। আমলকির রস চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী। আমলকির রসের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে একটি সহজ প্যাক তৈরী করতে পারেন। এছাড়াও শুষ্ক বা রুক্ষ চুলের জন্য একটি ভালো হেয়ার প্যাক তৈরী করা যায় মধু ও দুধ একসাথে মিশিয়ে ।
চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে আপনি উপরে লিখিত যেকোন একটি প্যাক সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ব্যবহার করবেন। একটানা ২ মাস ব্যবহার করলে আপনি নিজেই ফলাফল দেখতে পাবেন। এতে আপনার চুল হবে সুস্থ, সুন্দর এবং চুলের বৃদ্ধি হবে নজর কেড়ে নেওয়ার মতো।