চীন ভারত সীমান্ত উত্তেজনায় পুরো দক্ষিন পূর্ব এশিয়া টালমাটাল। বেশ কিছুদিন যাবত ভারত চীন সীমান্তে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তেজনার শুরু ঢোকালাম থেকে। চীন ভারত সীমান্তে ঢোকালাম নামক স্থানে চীনের ভুটান অভিমূখী রাস্তা নির্মাণে ভারত বাঁধা দিলে উত্তেজনার সুত্রপাত হয়। ভারতের দাবী ছিল ভারতের ভুখন্ড ব্যাবহার করে চীন এ রাস্তা নির্মাণ করছে। এটি নিয়ে প্রায় তিন মাস পরস্পর দুদেশের সেনাবাহিনী একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে থাকার পর সমঝোতা হয় এবং দু পক্ষই শেষ পর্যন্ত সীমান্ত থেকে পিছু হটে। এবারের উত্তেজনাটা ঢোকালাম ঘটনার ঠিক বিপরীত। এবার ভারত রাস্তা নির্মাণ করছে সীমান্তে এবং চীন বাঁধা দিচ্ছে যদিও রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। চীন মনে করছে এ রাস্তা নির্মিত হলে সীমান্ত প্রতিরক্ষায় চীন ভারতের ছেয়ে পিছিয়ে পড়বে।
চীন ভারত সীমান্ত উত্তেজনার এ ফাঁকে নেপালও সুযোগ বুজে ভারত-নেপাল সীমান্তে সংঘাত তৈরী করেছে। আর পাক-ভারত সীমান্ত সংঘাত তো সব সময় লেগেই আছে। বিভিন্ন সীমান্ত উত্তেজনায় পুরো এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা তৈরী হচ্ছে। এতসব উত্তেজনার মাঝেও সংগত কারনে বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাথে সাথে উদ্বিগ্ন ও বটে! আবার এই উত্তেজনায় এদেশে অনেকে উল্লেসিত হচ্ছে। যারা উল্লেসিত হচ্ছে তাদের ভুলে গেলে চলবেনা ভারতের সাথে পাকিস্তান কিংবা চীন অথবা নেপাল যদি সংঘাতে বা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশও আর নিরাপদ থাকবে না। কারন প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুনের দাবানল নিজের বাড়ি পর্যন্তও পৌঁছতে পারে। তাই বাংলাদেশও যে তার ভুক্তভোগী হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
যুদ্ধ, সংঘাত আর অশান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা। রোহিঙ্গা শরনার্থী নিয়ে যখন বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্ক অবনতি হয়, মায়ানমারের শত উস্কানিতেও শেখ হাসিনা সরকার ধর্য ধারন করেছে, বিছক্ষনতার পরিচয় দিয়েছে। মায়ানমারের সাথে কোন রকম সংঘাতে যায়নি। সংঘাতে গেলে একদিকে শরনার্থী ব্যাবস্থাপনায় বিশৃংখলা সৃস্টি হত অন্যদিকে অর্থনৈতিক ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হত, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হত। মায়ানমার সারা বিশ্বের দৃস্টি শরনার্থী সমস্যা থেকে সরিয়ে নিতে সফল হত। এশিয়ার যেকোন দেশ অন্য দেশের সাথে সংঘাতে জড়ালে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হবে। এ সত্যটি এ অঞ্চলের সব দেশকে উপলব্দি করতে হবে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ চীন তারপর ভারত। তাই এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পিছনে এ দুদেশের ভুমিকা অপরিহায্য। ভারতের অনেক শিল্পের কাঁচামাল চীন থেকে আসে, তাই চীনের কাঁচামাল ছাড়া ভারতের এসব শিল্প অচল। আবার ১২০ কোটি ভোক্তার দেশ ভারত চীনের জন্য বিশাল রপ্তানির আয়ের উৎস। সংঘাতের দিকে গেলে দুদেশেরই ক্ষতি বৈকি লাভ নেই। দুদেশই নিজেদের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন এবং বোকামি করে কেউ সংঘাতের দিকে পা বাড়াবে বলে মনে হয় না। বরঞ্চ চীন চাইলে পাক-ভারত দীর্ঘ বৈরিতার অবসানও হতে পারে। আবার চীন ও ভারেতর যৌথ প্রচেস্টা রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যার ও সমাধান দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মায়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও চীনের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। একে অপরকে পারস্পরিক শ্রদ্ধার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ সব পক্ষের মধ্যে সেতু-বন্ধন হিসেবে ভুমিকা নিতে পারে। এটি সম্ভব হলে এশিয়ায় একদেশের সাথে অন্য দেশের সংঘাত চিরতরে বন্ধ হবে। পুরো এশিয়ায় আবার শান্তির সুবাতাস বইবে। এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তরান্বিত হবে। এ অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করলে বাংলাদেশ সহ সব দেশিই তার বেনিফিশিয়ারি হবে।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর