ব্রিটেনের চিকিত্সকেরা বলছেন, আকারে ছোট হলে কী হবে, এই পোকা ভয়ংকর! একবার যেখানে কামড়ায়, সেখানে বসেই রক্তচোষে। শরীরে এমন ভাবে মিশে থাকে, সহজে চোখেও পড়ে না। আর এ ভাবে দিন কয়েক শরীরে বাসা বাঁধতে পারলেই আক্রান্তের পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস অবধারিত। যে কারণে ব্রিটিশ চিকিত্সকেরা চিন্তায় পড়েছেন।
এখন পর্যন্ত এ পোকার আক্রমণে মাত্র দু’জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু. দু’জন থেকে ১০ জন হতে সময় লাগবে না বলেই মনে করছেন চিকিত্সকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ব্রিটেনে এ ধরনের রক্তচোষা পোকার কামড় বিরল ঘটনা। ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান’-এ ক্ষুদ্রকায় ভয়ানক এই পোকা নিয়ে একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই পোকাটির কামড়ে একজনের বেবিওসিস রোগ হয়েছে। পোকার কামড় থেকে ব্রিটেনে এমন রোগের নজির নেই বলেই তাঁরা দাবি করেন। বেবিওসিস সাধারণত এক প্রকার পরজীবীর কারণে হয়ে থাকে। যারা রক্তের লোহিত কণিকাকে সংক্রমিত করে। এই পোকার কামড়ে টিবিই নামে আর একটি রোগও হতে পারে। মূলত ভাইরাল ইনফেকশন। এই সংক্রমণ সেন্ট্রাল নার্ভস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার জেরে আক্রান্ত পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, রক্তচোষা এই পোকা সাধারণত শরীরের এমন স্থানে কামড়ায়, যেখানে সহজে দেখা যাবে না। ওই স্থানেই বাসা বেঁধে ক্রমাগত রক্ত খেতে থাকে। কামড়ানোর স্থানে র্যাশ বেরোয়। তাই প্রদাহ বা জীবাণু সংক্রমণ হলে, ফেলে না-রেখে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে হবে। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীর থেকে পোকাটি টেনে বের করে, আক্রান্ত স্থানটি সাবান দিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের আর কোথাও কামড়েছে কি না, তা-ও ভালোভাবে দেখতে হবে।
ব্রিটেনের পাবলিক হেলথের উপদেষ্টা ডাক্তার ক্যাথরিন রাসেল জানান, বিরল ওই রক্তচোষা পোকাগুলো সাধারণত বসন্ত ও শরৎকালে সর্বাধিক সক্রিয় থাকে। তাই বাইরে বের হওয়ার সময়, সতর্ক থাকতে হবে।
সম্প্রতি চিনেও বিশেষ এক ধরনের রক্তচোষা পোকার কামড় থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নয়া ভাইরাসের সংক্রমণ। এর মধ্যে সাত জন চিনে মারাও গিয়েছেন। সংক্রামিতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে।
চিনের গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব চিনের জিয়াংসু প্রদেশ এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের শরীরে নয়া SFTS ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই ভাইরাসের কমন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দিকাশি, সেইসঙ্গে লিউকোসাইটের সংখ্যা হ্রাস। যাকে একসঙ্গে বলা হচ্ছে SFTS। অন্য দিকে, পূর্ব চিনের আনহুই প্রদেশও আরও ২৩ জন নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত।
কোভিড ভাইরাসের মতো নয়া SFTS ভাইরাস প্রাণঘাতী কি না, তা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে আছে। তবে, কোভিড থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আর গাছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে না চিন। বিশেষত, সাত জনের প্রাণহানির পর।
গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আনহুই ও জিয়াংসু প্রদেশে নয়া ভাইরাসের সংক্রমণে সাত জন এ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন। যদি চিনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, SFTS ভাইরাস (SFTS Virus) আদতে নতুন ভাইরাস নয়। ২০১১ সালেই এই ভাইরাসের প্যাথোজেনকে পৃথক করা হয়। এটি বুনিয়াভাইরাস (Bunyavirus)-এর ক্যাটেগরিতে পড়ে।
ভাইরোলজিস্টদের ধারণা, বিশের একধরনের রক্তচোষা পোকার কামড় থেকেই মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছে। তবে, মানুষ থেকে মানুষের শরীরে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা তাঁরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। রক্ত বা মিউকাস থেকে ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে সতর্ক করেছেন চিনের ঝিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিত্সক শেং জিফাং। সুত্রঃ এই সময়।