সারা বিশ্বে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করোনা ভ্যাকসিন নতুন করে আশার সঞ্চার করলেও চলতি বছরে যে তা হাতের মুঠোয় আসার কোনও সম্ভাবনা নেই, বুধবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিইয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওইদিন সংস্থার জরুরি বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান রাখঢাক না রেখে বলেছেন, ‘২০২১ সালের প্রথম দিকের আগে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলের আগে করোনা ভ্যাকসিন হাতের মুঠোয় আসবে, তেমন প্রত্যাশা মোটেও করবেন না।’
একই শঙ্কার কথা মঙ্গলবারই শুনিয়েছিলেন অক্সফোর্ড গবেষক দলের প্রধান সারাহ গিলবার্ট। ‘বিবিসি’ রেডিওকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনিও বলেছিলেন, ‘চলতি বছরে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়।’ অথচ ভারতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাজারজাত করার দায়িত্বে থাকা সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা দাবি করেছেন, ডিসেম্বরেই ভারতের বাজারে মিলবে করোনা ভ্যাকসিন?
ফলে প্রশ্ন উঠছে, যারা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত তাঁরা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন নিশ্চিত নয় চলতি বছরে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আসবে তখন কীভাবে একজন ব্যবসায়ী আগ বাড়িয়ে বলছেন, চলতি বছরে বাজারে মিলবে মারণ ভাইরাসের প্রতিষেধক? বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে বাজার থেকে মোটা টাকা তোলার লক্ষেই এমন কৌশল নিয়েছেন সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার।
আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেটে’ গত সোমবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের ফলাফল প্রকাশ হতেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্বের ফলাফলে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন মানবদেহের পক্ষ নিরাপদ এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
কিন্তু সেই আশায় কিছুটা জল ঢেলে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘করোনার প্রতিষেধক আবিস্কারের ক্ষেত্রে আমরা ভাল উন্নতি করছি। বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে আছে, ট্রায়াল চলছে। এগুলির একটাও এখনও ব্যর্থ হয়নি। সবগুলিই মানবদেহের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্যি হলো, এই ভ্যাকসিনগুলি ২০২১ সালের আগে মানুষের হাতে পৌঁছবে না। ২০২১ সালের প্রথম চার মাসের আগে করোনার টিকা পাওয়ার প্রত্যাশা না করাই ভাল।’