চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসন। রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই আসনটি। সাংবিধানিক ধারা মতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ফলে এখন থেকেই চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে মাঠ-ঘাট চসে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এর মধ্যে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। গোছাচ্ছেন সংগঠন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এর বাইরে নেই চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিও। ব্যাপক আলোচনা এবং পাশাপাশি সমালোচনাও চলছে সংসদীয় আসন লোহাগাড়া-সাতকানিয়া এলাকায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সব জায়গায় যেন নির্বাচনের আলাপ আলোচনা। লোহাগাড়া উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের এ আসনটি।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নির্বাচনী প্রচারে শাসক দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই এগিয়ে। বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াত প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ তেমন একটা নেই। তারা নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে বেশি সময় দিচ্ছে। তৃণমূল আ’লীগের নেতাকর্মীরা তার শক্তি জানিয়ে এই আসনের আ’লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জানিয়েছেন, দল আমাকে নমিনেশন দিলে আমি আবার এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো। নমিনেশন না দিলেও যেই নমিনেশন পাবে তার পক্ষে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আমি নৌকার লোক, অতীতের মত সবসময় নৌকার সাথেই আছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন,আমি সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মানুষের পাশে সব সময় ছিলাম আছি এবং থাকবো, এ জন্য তারা আমাকে নির্বাচিত করবে বলে আমি মনে করি। এদিকে কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী সমাবেশ করে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম আমিন।
আবারো দলীয় নমিনেশন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করে বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেছেন, এই আসনটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার আমার উপর আস্তা রাখবেন। বিগত ১০ বছরে সরকার ও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় আমি যা উন্নয়ন করেছি বিগত দিনে কেউ কখনো এত উন্নয়ন করতে পারে নি। তাই নমিনেশন পেলে এই এলাকার লোকজন আমাকে আবার তাদের কথা বলার জন্য সংসদে পাঠাবে।
আ’লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি শিল্পপতি এম.এ মোতালেব বলেছেন, তিনিও নমিনেশন চাইবে,তবে দল যাকে নমিনেশন দিবে তার পক্ষে কাজ করবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে তাকে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দেখা যাচ্ছে। এই আসনের সাবেক সাংসদ, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী এলডিপির সভাপতি কর্ণেল (অব:) অলি আহমদ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই আসনটি থেকে নির্বাচন করলেই গত নির্বাচনে জোটগত কারণে তিনি অংশ নেন নি, এই বারেও অনেকের মুখে তিনি নির্বাচন করবেন বলে শুনা গেলেও বাস্তবে তার কোন কর্মকান্ড এখানে দেখা যাচ্ছে না। অলি আহমদ এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাদিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
জামায়াতের দুই সম্ভাব্য প্রার্থী এত দিন কারারুদ্ধ হলেও গত কয়েকদিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আ.ন.ম শামসুল ইসলাম। এছাড়াও দলের নেতাকর্মীরা গোপনে ভোটের মাঠে তৎপর। দীর্ঘ সময় ধরে এলাকাটির ওপর ছিল জামায়াতের আধিপত্য। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট থেকে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে মনোনয়ন পেয়ে আসছিল জামায়াতের প্রার্থী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশিবার জামায়াত যে আসনটি জিতেছিল সেটি এই আসন। এলাকাটি জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হলেও সবশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জয়লাভ করেন। ফলে ১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালে প্রথমবার এ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। যদিও ২০১৪ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। এরপরও আসনটিকে মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং মনে করা হচ্ছে আওয়ামীলীগের জন্য।
লোহাগাড়া-সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে একাধিক পক্ষ এবং বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। তবে মাঠের রিপোর্ট বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে দলটি প্রায় গোছানো। দলটির পক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং সাতকানিয়া উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম. এ মোতালেব।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা ২ জন। জামায়াত এর কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ও সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শাহজান চৌধুরী এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ.ন.ম শামসুল ইসলাম চৌধুরী। জামায়াত এর মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব শাহজান চৌধুরী কারাগারে থাকায় ওনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী আ.ন.ম শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না তারা,সে জন্য প্রার্থী নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসে নি।
অন্যদিকে এল.ডি.পির চেয়ারম্যান ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্ণেল অলি আহমেদ ও রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়। এছাড়া বি.এন.পির ও ২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকার কথা জা নিয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান মুজিব চেয়ারম্যান বলেন, সাতকানিয়া লোহাগাড়া বিএনপির ঘাটি। আর আমি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি, সুখে, দুখে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মানুষের পাশে ছিলাম। আমার দল ও জোট আমাকে মনোনয়ন দিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই আসনটি উপহার দিতে পারবো।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা ব্যাক্ত করে বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী লোহাগাড়া উপজেলা বি.এন.পির আহব্বায়ক লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন,আমি দল এবং সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষের পাশে আগেও ছিলাম এখনো আছি। দল আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি এই আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
আসনটিতে বিএনপির সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল হোসেন এর নাম ও শুনা যাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায়। তাবে তাকে তেমন কোন সভা সমাবেশে দেখা যায় না। গতকিছুদিন আগে একটি মামলায় জামাল হোসেন কারাগারে রয়েছেন তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। তবে নির্বাচন যারাই করুক না কেন সাধারণ মানুষ তথা এই আসনের ভোটাররা জানিয়েছেন,তারা আসলে সুষ্ঠু ভোট চান এবং নিজের ভোট নিজে দিতে পারার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:১৮ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি