জার্মানীর গোয়েবেলসের কথা সকলেরই জানা। একটি মিথ্যাকে বার বার বললে তা মানূষ সত্য বলেই মেনে নেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই গুয়েবেলসের নীতিটিই অনুসরন করছে বিরোধী দলের নেতারা। গতকাল একটি টক শো দেখছিলাম আর মানূষের মন্তব্য পড়ছিলাম। একটিও ভাল মন্তব্য দেখিনি। তার মানে সরকার দেশের সব কিছু খেয়ে ফেলছে! যদি তা’ই সত্যি হয় তাহলে দেশের এত বড় উন্নয়ন হল কি করে? পদ্মা সেতুর মত প্রকল্প শেষ হল কিভাবে। সব টাকা যদি সুইস ব্যংকেই চলে গিয়ে থাকে তাহলে, ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিমান মওজুত থাকে কিভাবে? রাস্তা, মেট্রোরেল, ফ্লাই ওভার, হাই ওয়ে রেল লাইন সম্প্রসারন হচ্ছে কিভাবে? দেশের বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি হল কিভাবে? এসব কি বিদেশীরা করে দিয়েগেছে? বিরোধী দল যারা সংসদের বাইরে তারা সরকারের কোনই সাফল্য দেখতে পাননা। বি এন পি বিগত ১২ বছরে সরকারের সাফল্য খুজে পানননি। সরকার যখন দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত তখন বিরোধী দলের নেতারা অনবরত সরকারের ব্যর্থতার জিগির করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বরাবরই প্রচারে দুর্বল এবং, সেই দুর্বলতার সুযোগে সরকারের সাফল্যকে ব্যর্থতার প্রচার করে চলেছে। করোনাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে মানূষকে খেপিয়ে তুলেছে। অথচ এমেরিকার মত দেশেও আজ সংবাদ বেড়িয়েছে করোনায় মৃতের সংখ্যা প্রদর্শিত সংখ্যার ১০ গুন। এমেরিকায় যে রোগের চিকিতসা নেই সেখানে বাংলাদেশের মানূষের ( নেতাদের) প্রত্যাশাটি কি? এমন হয়েছে যে, লকার ও পকেট কাটা গেলেও সরকারকেই দায়ী করে। একই অবস্থা বংগবন্ধুর সরকারের সময়েও হয়েছিল। দিনরাত অপপ্রচার করে বংগবন্ধুর মত নেতাকেও ক্ষতি করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা সেদিনও বিষটি উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের নেতারা নিশ্চুপ আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অবিরাম গুয়েবেলস করে চলেছে। মানূষ গুয়েবেলসকেই বিশ্বাস করছে, বিরূপ মন্তব্য করছে সরকারের বিরুদ্ধে। বিরোধী দল ক্ষমতায় নেই, আন্দোলনেও নেই কিন্তু, গুয়েবেলস এ লেগে রয়েছে দিনরাত। এখন অসত্যই সত্য হয়ে গেছে মানূষের মূখেমূখে। রাজনীতিতে বিষয়টি বিপদসংকেত। শুধু বিরোধী দল নয়, প্রচারমাধ্যম হল সবচেয়ে বড় গুয়েবেলস। টক শো শুরু করে করোনা নিয়ে। যাদেরকে আলোচনায় ডাকেন তারা সবাই ডাক্তার না৷ প্রশ্ন করেন ” করোনা প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ কেন”? প্রশ্নতেই গলদ। সরকার ব্যর্থ এমন তথ্য প্রশ্নকর্তা পেল কোথা থেকে? সংগে নিয়ে আসেন একজন বিরোধী দলের নেতা, তার কাজ হলো শুধু সরকারের ব্যর্থতার কথা বলা। কিন্তু সরকার যে ব্যর্থ এই তথ্যটি কে দিল? করোনা নিয়ে আলোচনা করতে এসে শুরু হয় প্রতিপক্ষের মুন্ডুপাত। নদীর রচনা লিখতে গিয়ে গরুর রচনা লেখার মত অবস্থা। দেশের সবকটি টেলিভিশন ২৪ ঘন্টা মুন্ডুপাত করে মুলত সরকারের। মানূষও দুই পক্ষের ঝগড়াঝাটি শুনে মিথ্যাটিকেই গ্রহন করে কারন। এখন আবার ভার্চুয়াল কনফারেন্স চলছে দেশে বিদেশে। সরকারের মন্ত্রী এম পি’রাও ডাক পেলেই এসে হাজির হন ,অনেকের প্রস্তুতিও থাকেনা। সরকারী দলের মূখপত্র হয়ে গনমাধ্যমে তারা কথা বলেন যার বেশীর ভাগই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে জনমনে। এখন ভার্চুয়াল বৈঠক পৃথীবির দেশে বিদেশে বেশী চলছে এবং টেলিভিশনের চেয়ে বেশী। যারা সঞ্চালক হন তাদের না আছে অভিজ্ঞতা, না আছে সাংবাদিকতার নূন্যতম শিক্ষা। আপন ভাবনাকেই সম্বল করে টক শো করেন গনমাধ্যমে। চিন্তাকে নিক্ষেপ করেন আলোচনার জন্য। নেতাদের, বিশেষকরে সরকারী দলের নেতাদের উচিত বিষয়টি আমলে নেওয়া। আন্দোলন না করেও সরকারের সাফল্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে গুয়েবেলস প্রচারনা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৫ জুন ২০২০।