তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকজন আদিবাসী যুবককে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠেছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। আহতরা হলেন- উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল খাসিয়া পুঞ্জির রাজেশ খাসিয়া (২২), ওয়ান কে মেন (২৮) ও বিবার জেন (২৬)। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত রাজেশ খাসিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকায় স্থানীয় আদিবাসী আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর খাসিয়া পুঞ্জির মুখোমুখি হয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জি। খেলা চলাকালে পেনাল্টি কিক নিয়ে রেফারির সঙ্গে কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির খেলোয়াড়দের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় মাঠে প্রবেশ করে পেনাল্টি নিয়ে আপত্তি জানান কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজার বয়োজ্যেষ্ঠ সুখমন খাসিয়া। একই সময় টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকা বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনও খেলার মাঠে প্রবেশ করেন। তখন তিনি কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজারকে পেনাল্টি মেনে নিতে জোরাজুরি করলে খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজার সুখমন তা প্রত্যাখান করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এসময় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন টিম ম্যানেজার সুখমন খাসিয়াকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে চেয়ারম্যান তাকে লাথি মারেন। বাবাকে মারতে দেখে সুখমনের ছেলে এগিয়ে এসে সিরাজ উদ্দিনকে ধাক্কা দেন। এরপর সিরাজ উদ্দিনের পক্ষের লোকজন মিলে কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির খেলোয়াড়দের অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং কয়েকজনকে মারধর করেন।
পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির খেলোয়াড়দের উদ্ধার করে।
কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজার সুখমন খাসিয়া বলেন, রেফারি খেলায় ৫ নম্বর খাসিয়া পুঞ্জির খেলোয়াড়দের পক্ষ নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। প্রথমে আমার দলের খেলোয়াড়রা তাতে আপত্তি জানায়। পরে আমি মাঠে গিয়ে আপত্তি জানালে খেলায় অতিথি হিসেবে থাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন পেনাল্টি মেনে নিতে আমাকে চাপ দেন। আমি তার কথা প্রত্যাখান করে আমার দল নিয়ে মাঠ থেকে বেরুবার চেষ্টা করলে সিরাজ উদ্দিন আমাকে কলার চেপে ধরে চড়-থাপ্পড় মারেন। এসময় আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন তিনি আমাকে লাথি মারেন। আমাকে বাঁচাতে আমার ছেলে এগিয়ে আসলে চেয়ারম্যানসহ তার পক্ষের লোকজন আমাদের অবরুদ্ধ করে মারপিট করেছে। এতে আমাদের দলের কয়েকজন খেলোয়াড় ও সমর্থক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এরমধ্যে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট পাঠানো হয়েছে। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি কল না ধরায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় পেনাল্টি নিয়ে বড়লেখা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আমার ইউপির কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজার সুকমন খাসিয়াকে থাপ্পড় ও লাথি মারেন। বাবাকে মারতে দেখে সুকমনের ছেলে সিরাজ উদ্দিনকেও আঘাত করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন কুমারশাইল খাসিয়াপুঞ্জির টিম ম্যানেজার, খেলেয়াড় ও সমর্থকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং কয়েকজনকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমি থানার ওসি সাহেবসহ পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করেছি। আহতদের একজনকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, দুই আদিবাসী দলের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। খেলায় পেনাল্টি কুমারশাইল পুঞ্জির বিপক্ষে যায়। এটা তারা মানেনি। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন কুমারশাইল পুঞ্জির একজনকে চড় মেরেছেন। তারাও চেয়ারম্যানকে ধাক্কা মেরেছেন। এনিয়ে উত্তেজনা ছিল। পরে পুলিশ পাঠিয়ে উত্তেজনা নিরসন করা হয়েছে। উত্তর শাহবাজপুরের চেয়ারম্যান থানায় আসছিলেন। ঈদের পরে উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি বসে সমাধান করা হবে।