মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ক্ষমতার দাপটে রাস্তা ও ছড়া দখলে করে একটি ফার্ম স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে কাজী ফার্ম লিমিটেড এর বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ সেই পাকিস্তান আমলে থেকে চলাচলের রাস্তা ও সরকারি ছড়ার পানি ব্যবহার করতে না পারায় এবং ছড়া দখল করার ছড়ার পাড়ের বাড়িঘর নিয়ে চরম ভুগান্তিতে পড়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ফার্ম তৈরির শুরু থেকে ভুক্তভোগিরা শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান জহর লাল বর্ধন এর কাছে অভিযোগ দিলে দু’দিন তিনি কাজ বন্ধ করে রাখেন চেয়ারম্যান। পরে অদৃশ্য শক্তির কাছে বেআইনিভাবেই সরকারি ছড়া নিজেদের দাবি করে ফার্মের দখলের উদ্দেশ্যে নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে এমনটাই অভিযোগ করে গ্ৰামবাসী।
সূত্র জানায়, দখলে নেওয়া সরকারি ছড়ার ওপর বাঁধ দিয়ে সংকোচিত করা হয়েছে। এতে ছাড়ারপারের বসবাসরত মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ও ফার্মের দূষিত বর্জ্যের পানি ছড়ায় মধ্যে ফেলার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত। ছড়ার পানিতে গ্ৰামবাসী দৈনন্দিন জীবনে গোসল করা থেকে শুরু করে সকল কাজে ব্যবহার করা হতো। এ ফার্ম স্থাপনের পর থেকে দুই গ্ৰামের মানুষ খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। যেখাবে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং আইন উপেক্ষা করে দখলে নিয়েছে কাজী ফার্ম লিমিটেড কোম্পানি। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি ছড়ার অংশ বিশেষও দখলে নিয়েছে ভূমিখেকো কাজী ফার্ম।
এলাকাবাসীরা জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে ছড়াটি দখলে মেতেছে কাজী ফার্ম। যুগযুগ ধরে বাজারে, খেতে কৃষিকাজে যাওয়ার কাজে এই রাস্তা ব্যবহার করে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু রাস্তাটি কাজী ফার্ম লিমিটেড গিলে ফেলায় এলাকার দুই গ্ৰামের হাজার-হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলের পথ বন্ধ করা ও ছড়ার পাড়ের বাঁধ নির্মাণ করে পানির গতিরোধ সহ ছড়ারপাড়ের বসবাসরত মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছে এমনটাই অভিযোগ গ্ৰামবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তাটি বন্ধ করে ক্ষান্ত হয়নি, ফার্মের দুর্গন্ধে বসবাস করাই অনেক কষ্ট হয়ে পড়েছে গ্ৰামবাসী প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ে ফার্মের দূর্গন্ধের কারণে। আমাদের সাথে কাজী ফার্ম যা করে যাচ্ছে তাদের উপর আল্লাহর লানত পড়বে।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ছড়া দখলে নেওয়ায় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পানি নিঃস্কাশন। ফলে বর্ষা মৌসুমে বাড়ি ঘরে পানিতে তলিয়ে যায়। বহুদিন ধরে স্থানীয়রা এই সমস্যার প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিনিধিদের দারস্থ হয়েও কোনো সুরহা হয়নি।
স্থানীয়রা আরো জানান, কাজি ফার্ম লিমিটেড স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে হাত করে অবস্থান নিজেদের করে নিয়েছে। তারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ভুক্তভূগীদের। এসব প্রভাবশালীদের নানা সুবিধা দিয়ে তারা বছরের পর বছর তাদের অপকর্ম চাপা রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এসব প্রভাবশালীদের চাপ ও ভয় উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্থরা ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করতে সাহস যোগায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে যে রাস্তা ধরে গরু, মহিষ, ছাগল নিয়ে কিংবা ক্ষেত খামার করার জন্য যেতাম সেই রাস্তা দখলে নিয়েছে কাজি ফার্ম লিমিটেড। কৌশলে তারা এই রাস্তা দখল করে কারখানার সীমানা করে সরকারি ছড়াটিও ভরাট করে দখলে নিয়েছে কাজী ফার্ম লিমিটেড।
কাজী ফার্ম লিমিটেড এর দায়িত্বরত কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নতুন আসছি আর জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার দায়িত্বে না, অন্য আরেকজন সেসব দেখাশোনা করেন। ঐ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন।
এবিষয়ে জানতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আশিদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান জহর লাল বর্ধন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কাজী ফার্মের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম কিন্তু তারা জানায় তাদের নিজেদের খরিদকৃত জমি। তিনি আরও বলেন, এ গ্ৰামে আমার ও বাড়ি। পরিতাপের বিষয় চেয়ারম্যান এক সময় বাঁধা প্রদান করে কাজ বন্ধ রেখেও অদৃশ্য শক্তির কাছে দু’দিন পর থেকে আবারও বাঁধা দেয়া কাজ পুনঃরায় চালু হলেও চেয়ারম্যান কোন কথা বলেনি এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মাইদুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসলাম বলেন, সরকারি ছড়া দখল করে ভড়াট করে কোন স্থাপনা বা ভরাট করাই অপরাধ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
আজ ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | ৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:২৯ | বুধবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি