দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ক্রীড়াঙ্গনের একাধিক ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। জাতীয় ফুটবলের দলের সাবেক খেলোয়াড় আব্দুস সালামও জিতেছেন বিপুল ভোটে। এছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনের এক ঝাঁক ব্যক্তিত্ব জয় লাভ করেছেন ভোটে।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক সাকিব-মাশরাফীসহ ক্রীড়াঙ্গনের যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন জাতীয় সংসদে।
সাকিব আল হাসান
মাগুরা-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে ১,৮০,৩৫৭ ভোটের বিপুল ব্যবধানে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বিশাল জয়ের পথে সাকিব পেয়েছেন ১,৮৫,৮৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের অ্যাড. কাজী রেজাউল হোসেন পেয়েছেন ৫,৪৭৬ ভোট।
মাগুরা-১ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা ৪,০০, ৪৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,০০, ৮৮২ ও নারী ভোটার ১,৯৯,৬২১ জন।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও একই আসন থেকে জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন তিনি। বেসরকারি ফলাফল, নড়াইল-২ আসনে ১,৮৫,০৬১ ভোটের বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ম্যাশ।
ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা মাশরাফী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান (হাতুড়ি) প্রতীকে ৪,০৪১ ভোট পেয়েছেন।
নড়াইল-২ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ ৬৫ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৮১,৯৯০ ও নারী ভোটার ১,৮৩,৭৩৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।
নাজমুল হাসান পাপন
কিশোরগঞ্জ-৬ (কুলিয়ারচর ও ভৈরব) আসন থেকে নৌকার মাঝি হয়ে আবারও জিতেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বেসরকারি ফলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী মো. রুবেল হোসেনকে ১ লাখ ২২ হাজার ১০৭ ভোটে হারিয়েছেন তিনি।
নৌকা প্রতীকে নাজমুল হাসান পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৪০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুবেল হোসেন মোমবাতি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ২৯৮ ভোট।
আসনটিতে ১৪২ ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৪ জন। নাজমুলসহ সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭ প্রার্থী।
সাবের হোসেন চৌধুরী
ঢাকা-৯ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। নৌকার হয়ে ৯০ হাজার ৩৯৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির কাজী আবুল খায়ের পেয়েছেন ২ হাজার ৭৯৪ ভোট।
ঢাকা-৯ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা চার লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,২৮,৩৩৪ ও নারী ভোটার ২,২১,৫৮৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার পাঁচজন।
আ হ ম মোস্তফা কামাল
আইসিসি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল নৌকার হয়ে জিতেছেন কুমিল্লা-১০ আসনে। পেয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির জোনাকী হুমায়ুন পেয়েছেন পেয়েছেন ৮ হাজার ৫৪৮ ভোট।
কুমিল্লা-১০ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা ছয় লাখ ২১ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩,১৯,০৪৯ ও নারী ভোটার ৩,০২,৮৮০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।
কাজী নাবিল আহমেদ
বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ থেকে আওয়ামী লীগের হাল ধরছেন। জয়ী হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) মহিত কুমার নাথ পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৫১১ ভোট।
যশোর-৩ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৯২,৯৪০ ও নারী ভোটার ২,৮৬,৯৮৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছয়জন।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল
আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েছেন বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ৭২ হাজার ৭১৮ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) সফি আহমদ সলমান পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৫২ ভোট।
মৌলভীবাজার-২ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৪৬,৬৩৬ ও নারী ভোটার ১,৩৮,৮৪০ জন।
নসরুল হামিদ বিপু
সাবেক হকি খেলোয়াড়, ঢাকা আবাহনীর পরিচালক নসরুল হামিদ বিপু ঢাকা-৩ বিজয়ী হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩২ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকে মনির সরকার পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৮ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৪ ভোট।
ঢাকা-৩ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ ৪২ হাজার ৫৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৭৪,৮৯৪ ও নারী ভোটার ১,৬৭,৬৪৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুইজন।
পাশাপাশি ক্রীড়াঅঙ্গনের আরও কিছু পরিচিত মুখ সংসদ সদস্য হওয়ার কৃতিত্ব গড়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিসিবির সাবেক পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। দুই সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫ ও বীরেন শিকদার মাগুরা-২ এবং গত সরকারের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল গাজীপুর-২ আবারও নৌকার হয়ে জয়লাভ করেছেন।
আবাহনীর পরিচালক শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ আসন থেকে এবং আবাহনী ক্লাবের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান জয়ী হয়েছেন ঢাকা-১ আসন থেকে।
ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়া দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সভাপতি সরকার থেকে মনোনীত। যাদের অনেকেই এমপি ও মন্ত্রী। তাদের মধ্যেই অনেকেই পুনরায় নৌকার প্রার্থীতা করে জয়ী হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খান (মাদারীপুর-২), বাংলাদেশ ক্যারম ফেডারেশনের সভাপতি জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩)। তাছাড়াও বাফুফের সাবেক রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বান্দরবান থেকে নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন।
এছাড়া সাবেক ফুটবলার দেওয়ান সফিউল আরেফিন (টুটুল) স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোড়া) হয়ে নির্বাচন করেছেন মানিকগঞ্জ দুই আসনে। তবে জয়ী হতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের সভাপতি আবদুস সোবহান গোলাপ মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার হয়ে নির্বাচন করেও হেরেছেন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম