ডিবিএন ডেস্কঃ বাংলাদেশ সাধারণত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে মার্কিন ডলারে। কিন্তু টাকার বিপরীতে বেড়ে চলছে মার্কিন ডলারের দাম। রপ্তানি কম হওয়া এবং রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা। ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এবার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রার ডিলার হিসেবে কর্মরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ মার্কিন ডলারের মূল্য ৮৭ টাকা। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর উঠেছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ যারা ভ্রমণ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের ৮৭ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ যাবৎকালে ডলারের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান ছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সেসময় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় উঠেছিল। গত বৃহস্পতিবার সে রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাকে দুর্বল করে দিয়ে ডলার হয়েছে আরো শক্তিশালী। এদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম উঠেছে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায়। খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৭ টাকা ৮০ পয়সা।
বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্বাধীনতার পর থেকে সরকার নির্ধারণ করে দিত। টাকাকে রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা করা হয় ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ। আর ২০০৩ সালে এই বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এরপর থেকে আর ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না। তবে টাকার বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক থাকেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই এতে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট নীতি।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে চাপ বেড়েছে আমদানিতে। ফলে এর দায় পরিশোধে লাগছে বাড়তি ডলার। এ কারণে বাড়ছে ডলারের দর। তবে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নিজেদের মধ্যে ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা দরে ডলার লেনদেন করছে ব্যাংকগুলো। গত ২ সেপ্টেম্বর এ দর ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। আগের মাসের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এ হিসাবে ডলারের বিপরীতে ৩৪ কর্মদিবসের ব্যবধানে ৫০ পয়সা দর হারিয়েছে টাকা। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই থেকেই ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা স্থিতিশীল ছিল ডলার।
ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত নিচ্ছে। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশিরভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার উপরে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকে ৮৮ টাকা ছাড়িয়ে গেছে নগদ ডলারের মূল্য।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মতোই বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে মানি এক্সচেঞ্জ কমিশনগুলো। মতিঝিল পাইওনির এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ডলার কিনছেন ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় আর বিক্রি করছেন ৮৭ টাকা ৭০ পয়সায়।
এদিকে, খোলাবাজারেও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম। খোলা বাজারে আজকের ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮৯ টাকা পর্যন্ত এবং কিনছে ৮৭ টাকা থেকে ৮৭ টাকা ৩০ পয়সা।
অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়িত হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, টাকার মূল্যমান কমায় তারা খুশি। কারণ এতে আগের তুলনায় বেশি আয় হচ্ছে তাদের। কিন্তু এই রপ্তানিকারকদের একটি অংশ যখন আমদানিকারক, তখন আবার বিষয়টি নিয়ে তারা নাখোশ। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হচ্ছে। আবার প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। তাই টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না এসব ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের পণ্যের আমদানি বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাংলাদেশে করোনার মধ্যেই পুরোদমে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চলছে। সব মিলিয়ে আমদানি বাড়াটাই স্বাভাবিক। আর এটা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক।