নেতা শব্দটি রাজনীতিতে এক সম্মনজনক উপাধী যা অর্জন করতে হয়। নামের সংগে নেতা যুক্ত করে সম্বোধন করার যৌক্তিক কারনও রয়েছে। নেতা হবেন জনতার প্রিয় মানুষ যাকে সবাই ভালোবাসে এবং নেতাও জনতার জন্য কথাই বলেন। নিজেকে উৎসর্গ করেন নেতা জনতার ভালোবাসার জন্য। সুখ সাচ্ছন্দকে স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দেন জননেতা। নেতা মানুষের ভালোবাসাতায় তৃপ্ত হন, ঐশির্য্যে নয়। সৎ নেতা সত্য কথা বলেন,মাথানত করেননা অন্যায়ের কাছে। নীতির প্রশ্নে আপোষ করেননা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও। অন্যায় দেখলেই গর্জে উঠেন, প্রতিবাদ করেন অন্যায় আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এমন নেতা ক’জন আছে এখন? দলের আদর্শটিওত মানেননা এখন অনেকে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে গেলেই ভুলে যান তিনি মানূষ, তখন তিনি শুধুই নেতা। নেতার পোশাক গায়ে জড়িয়ে নেতা হওয়া যায়না, জনগনের আস্থা অর্জন করতে হয়। জাতীর জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন জননেতা। অতি সাধারন মানূষটিও নির্ভিয়ে চলে যেতেন বংগবন্ধুর কাছে। বংগবন্ধু বুকে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করতেন ” কেমন আছিস, খেয়েছিস কিছু?”।
এখন নেতাদের সংগে দেখা করাত দুরের কথা, বাড়ীর আংগিনায় যাওয়ার সুযোগটিও পায়না কেউ। চাটুকার আর চামচাদের ভিরে নেতার দেখা পাওয়াও দুঃসাধ্য। নেতা লোভ লালসাকে পরিহার করে জনতার কাতারে থাকার কথা, এখন নেতারা অট্টলিকায় থাকেন, দুর্গ নির্মান করেন জনগনকে সরিয়ে রাখতে। নির্বাচনে অর্থ দিয়ে মস্তান কিনে জয়ী হন, সম্পদ বাড়ান নিজেদেরই। তাই এখন জনবিচ্ছিন্ন নেতারা। জনতাকে দুরে ঠেলে দিয়ে আক্রে ধরেন সম্পদ আর ক্ষমতাকে। নেতাদের জৌলুস দেখে স্বপ্ন দেখে চরত্রহীন সন্ত্রাসিও। নেতা হয়ে ধনী হয় কুখ্যাত মস্তান, ডাকাতি না করেও অর্থবিত্তের মালিক হয় আলাদিনের বাতি স্পর্স করে। পথের ছেলেটিও এখন বড় নেতা। গাড়ী বাড়ী আর ক্ষমতার সুখে ভিন্ন চেহারা তাদের। সুখ প্রাপ্তির রাস্তা একটাই – রাজনীতি তাই, প্রতিযোগিতা নেতা হওয়ার। বিদ্যান হওয়ার দরকার নেই, নামের আগে ডক্টরেট লিখে দিলেও জিগ্যেস করার কেউ নেই। আগে ছেলেরা পড়ালেখা করে চাকুরীর খোঁজ করত, এখন লেখাপড়া না করে নেতার সংগে লেগে থাকে। এই লেগে থাকাতেই স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসে তদ্ববির করে।
তরুন সমাজ এখন রাজনীতি মূখী কারন- সূখ চাই। রাজনীতিতেই সূখ বেশী, অন্যরা সব নির্ভরশীল রাজনীতির উপর। ৭৩ সালের নির্বাচনে বংগবন্ধু সাংবাদিক এ বি এম মুসা কে নমিনেশন দিয়েছিলেন নরসিংদি থেকে। বলেছিলেন ” আমি সব পেশার প্রতিনিধিত্ব চাই সংসদে”। জনাব মুসা স্বক্রিয় রাজনীতি করেননি কখনো, সাংবাদিকতা করেছেন আমরন। টাকা পয়সাও ছিলনা নির্বাচন করার। বংগবন্ধু তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জনাব মুসা বেচে যাওয়া তিন হাজার টাকা ফেরত দিতে গিয়েছিলেন বংগবন্ধুর কাছে। এখন একটি শুন্য পদে নমিনেশন পেতে আবেদন করে ৩৫ জন প্রার্থী -কেন? কারন একটাই- সূখ। একবার নির্বাচীত হলেই শুধু সূখ আর সূখ। মরে গেলেও ছেলে, বউ কিংবা নতনী দাবিদার হবে। এমন সূখের পাখীরাই এখন নেতা। রাজনীতির প্রতি মানূষের আস্থ্যাহীনতা এই কারনেই সৃষ্টি হয়েছে, বিনষ্ট হয়েছে রাজনীতি। এখন নেতা আছে, জননেতা নেই। পদ পদবিও দখল হয়েগেছে সব। কেউ মরে না গেলে সেই পদ শুন্য হওয়ারও সুযোগ নেই। যতই নতুন নেতৃত্বের দাবী করা হউক- হবেনা। দখলদারিতে আটকে গেছে মেধাবী নেতৃত্ব আবিস্কারের পথটি। প্রায়ই শোনা যায় অমুক নেতা কিন্তু, বুঝিনা নেতা কেমন আর কি করলে নেতা হওয়া যায়।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরেন্টো, কানাডা
৬ সেপ্টম্বর ২০২০।