আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা চলে গেলেন টরেন্টোতে।তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এডঃ শরিফ আব্দুস সালাম, যূদ্ধ করে হেরে গেলেন। এমন মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি এখন প্রতিদিনই প্রায়। দেশের চিত্রটিও ভাল মনে হচ্ছেনা, মৃত্যু এবং সংক্রমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানূষ নিষেধাজ্ঞা মানছেনা, পুলিশ প্রহারা দিয়েও থামানো যাচ্ছেনা। গতকাল এক জানাজায় লোক সমাগম হয়েছে লক্ষাধিক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সংক্রমন ঠেকানো যাবেনা শত চেষ্টা করেও। টেলিভিশনে স্বাস্থ্য রক্ষার পরামর্শ প্রচারিত হচ্ছে রাত দিন, সব দেখেও মানূষের অবাধ চলাফেরা বিপদের সংকেত দিচ্ছে বাংলাদেশে।
সরকার সর্বাত্ত্বক চেষ্টা চালাচ্ছে সাহায্য বিলাতে। সঠিকভাবে এই সাহায্য বিতরন হলে এবং একজনেই বার বার সাহায্য পাওয়ার লোভ সংবরন করলে কাজের খোঁজে রাস্তায় বেড় হতে হতনা অন্তত কিছুদিন। কিন্তু অসাধু বিতরণকারী আর লোভী চোর এখনেও চোখ ফেলেছে। জাতীর এই দুঃসময়েও চুরি করে লুকিয়েছে। তবে ধরা পরেছে, সাজা হয়েছে চোরদের। বহিষ্কৃত হয়েছে নেতারা অনেকে। রিলিফ চুরি এবারই প্রথম নয় দেশে এবং এরা একটি সংগবদ্ধ চক্র। একজন বিক্রি করে অন্যজন কিনে গুদামজাত করে, ধরা পরে কমই। ধরা পরলেও বিচার হয়না। এবার হয়েছে, পদ পদবির পরিচয়ে কাউকেও রেহাই দেওয়া হয়নি।।
কিন্তু দুঃখজনক ভাবে রাজনৈতিক নেতারা এটাই উত্তম সময় ভেবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারনা শুরু করেছে। দেশের বর্তমান অচল অবস্থাকে সরকারের ব্যর্থতা প্রমানের চেষ্টা করে বক্তব্য দিচ্ছেন গনমাধ্যমে। যে সময় সম্মিলিতভাবে সরকারের সাথে একাত্ব হয়ে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা করা প্রয়োজন তখন, নিরাপদ অবস্থনে থেকে সরকারের সমালোচনা করে চলেছেন অনেকে। যারা নিত্য সরকার বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের কি কোনই দ্বায়িত্ব নেই?
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি এখনো, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভেন্টিলেশনের অপ্রতুল্যতা এখন আমেরিকা, ইংল্যন্ড, জার্মানী, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পৃথিবীর সব দেশেই। আজ ( ১৯ এপ্রিল ২০২০) আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা ১০ বাংলাদেশী সহ ৮০০ এরও বেশী। দেশটি এখন নির্বাচনমুখী, সেখানে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা কেউ সরকারকে দ্বায়ী করে বক্তব্য দেননি। কারন তারা জানে, কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে এক মহামারি। এই দুর্যোগে দেশের মানূষের জীবন রক্ষা করাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান কর্তব্য, নির্বাচনে জয়ী হওয়া নয়।
বাংলাদেশেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আধুনিক না হয়েও বিশ্বের উন্নত দেশের মতোই সব পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন এবং নিজে তদারকি করছেন। হাজার রকম প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে জনগনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অন্য কোন নেতা পারলেন না কেন। প্রতিদিন টেলিভিশনে মূক্ত আলোচনায় যারা মুল্যবান জ্ঞান বিলাচ্ছেন, তারা বসে আছেন কেন? জনগনের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা কি তাদের নেই? কোন মন্ত্রী কি বলেছে, কেমন করে বলেছে, কেন বলেছে এই আলোচনায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরেছেন তারা। আসলে সব কাজ করছেন কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাই। জাতীয় সংসদের ৩৩০ জন এম পি রয়েছেন। প্রতিদিন তাদের চলাচল দেখে মনেহত মহারাজা। আগে পিছে মটর সাইকেলের বহর দেখে আম জনতা ভরকি খেত। এই নেতারাইবা এখন কোথায়? নির্বাচনের সময় কত সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, জাতীয় দুর্যোগে তারা অন্তরালে কেন?
কোভিড – ১৯ শীঘ্রই শেষ হবার নয়। যারা নিরাপদ আশ্রয়ে বসে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবছেন, আসলে আপনিও নিরাপদ নন। এই মৃত্যু হলে কিছু না বলেই চলে যেতে হবে তাই, একটু দয়ালু হউন। অন্যের বিপদ দেখে খুশী হবার কারন নেই।
বিপদ এখানেই শেষ নয়, আসছে দুর্ভিক্ষও। অচল পৃথিবীর উৎপাদন বন্ধ, রপ্তানী নেই কোথায়ও। একমাত্র কৃষি উৎপাদনই বেঁচে থাকার রসদ দিবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শি পরিকল্পনায় কৃষি উৎপাদন ভাল হয়েছে বাংলাদেশে, এখন দরকার সুষ্ঠ তদারকির। চুরি করা আর এই দুর্দিনে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা দুটোই সমান অপরাধ। এই অপরাধের ক্ষমা পাবেনা কেউ।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
১৯ এপ্রিল ২০২০