মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লস্করপুর গ্রামে এক নববধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিয়ের ঠিক ৮ মাসের মাথায় নববধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে স্বামীর বাড়ীর লোকজন। তবে নিহতের পিতার বাড়ীর লোকজনের তৎপরতা ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ গৃহবধূর স্বামী কামরুল ইসলাম ও স্বামীর ভাবি আছমা বেগমকে আটক করেছে এবং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহত সেবিনা আক্তার রুলী (১৯) উপজেলার গাজিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের মেয়ে।
নিহত গৃহবধু সেবিনা আক্তার রুলীর পিতার বাড়ির লোকজন অভিযোগ করে বলেন, গত ৮ মাস পূর্বে রুলীকে কুলাউড়া পৌর এলাকার মৃত ছত্তার আলীর পুত্র কামরুল ইসলাম (২৭) এর সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের সময় স্বামীর চাওয়া উপহারের সব দাবী পরিশোধ করা হয়। বিশেষ করে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে ফার্নিচার ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজসহ বিয়ের অনুষ্টান বাবৎ ৬/৭ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়ীর লোকজনের অত্যাচার শুরু হয় রুলীর উপর। ছোটখাটো অজুহাতে ও নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হতো রুলীর উপর। যৌতুকও চাওয়া হয়। রুলীর ভাইবোন স্বামীর বাড়ীতে বোনকে দেখতে আসলে তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখানো হতো যাতে তারা আর না আসে। এভাবে কিছুদিন চলার পর রুলীর স্বামী কামরুল জড়িয়ে পড়ে তার ভাবী আছমা বেগমের সাথে পরকীয়ায়। এতে রুলী বাঁধা দিলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে।
গত ১ মাস পূর্বে এ নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে জনপ্রতিনিধি, সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে দু’পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসায় সমাধান হয়। মীমাংসা হওয়ার কিছুদিন পর রুলী তার চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে পিতার বাড়ীতে আসে। কয়েকদিন পিতার বাড়ীতে থাকার পর স্বামীর বাড়ীতে রুলীকে নিয়ে যান রুলীর চাচা রেনু মিয়া। এবং গত ২৯ ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) তাকে (রুলী) কে হত্যা করে রুলী মারা গেছে বলে ফোন করা হয় স্বামীর বাড়ীর পক্ষ থেকে। কিন্তু রুলীর সমস্থ শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
পুলিশ ১লা মার্চ (শুক্রবার) লাশ উদ্বার করে পোষ্টমর্টেম করে এবং গৃহবধূ হত্যা ঘটনায় স্বামী কামরুল ইসলাম ও স্বামীর ভাবি আছমা বেগমকে পুলিশ আটক করে।
নিহত রুলীর মা ফাতেমা বেগম জানান, ‘তিনি ৪ সন্তানকে অনেক কষ্ট করে ভরন পোষন করেছেন। রুলীর পিতা মারা যাওয়ার পর তিনি প্রবাসে কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে রুলীকে এসএসসি পাশ করিয়েছেন এবং রুলীকে বিয়ে বাবৎ ৬/৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। রুলীর সুখের আশায় ঋণ করে এ টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়ে তরতাজা মেয়েকে পাষন্ড স্বামী, স্বামীর ভাবি আছমা বেগমসহ স্বামীর বাড়ীর অন্যান্য লোকজন আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) কৈশন্য জানান, নিহত গৃহবধুর পরিবারের অভিযোগে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং স্বামী ও তার ভাবীকে আটক করা হয়েছে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:৪০ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি