কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার বরুড়ায় যৌতুকের জের ধরে নববধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় স্বামী। স্বামী রেজাউলের বাড়ি বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী গ্রামে। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার রহস্য উদঘাটন এবং নববধূর স্বামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রেস কনফারেন্সে বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) প্রেস কনফারেন্সে কুমিল্লার র্যাব ১১, সিপিসি ২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, যৌতুকের কারণে পারিবারিক বিরোধের জেরে গত বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী গ্রামে গত ১১ মার্চ রাতে নিহত ইয়াসমিন আক্তারকে (২২) শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী রেজাউল করিম। তারপর নিজেকে আড়াল করতে রেজাউল ভোরে তার স্ত্রীর মরদেহে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে চলে যায়। কয়েকদিন পর সেই আত্মগোপনে চলে যান। এই হত্যাকান্ডের ঘটনা উদঘাটনে তদন্তে নামে র্যাব। পরে গত ২৮ মার্চ রাতে কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে রাত ৯টায় ঘাতক রেজাউল করিমকে আটক করা হয়।
এর আগে ইয়াসমিনের ভাই রাকিবের করা মামলা ও আটক রেজাউলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উন্মোচন হয়। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি পারিবারের অমতে নিহত ইয়াসমিন আক্তার (২২) এর সাথে ঘাতক রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য নববধুকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। নববধু যৌতুক না আনায় রেজাউলের পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। একদিকে রেজাউলের পরিবার অপর দিকে যৌতুকের চাপের কারণে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে উঠে। এ নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং তারিখে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সামাজের ব্যক্তিবর্গ সালিশে বসে বিষয়টি সমাধান করেন এবং তাদেরকে একত্রে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। সালিশে রেজাউল বিষয়টি মেনে নিয়ে একত্রে থাকতে শুরু করে কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃত রেজাউল করিম জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ১০ মার্চ ২০২২ইং তারিখ বিকেলে রেজাউলের সাথে ইয়াসমিন আক্তারের যৌতুক নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে রেজাউল ভিকটিমকে চড়থাপ্পড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পুনরায় তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হলে রেজাউলের বাবা মা তাদেরকে চুপ থাকতে বলে। গভীর রাতে রেজাউলের বাবা মা ঘুমিয়ে গেলে পুনরায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রেজাউল ক্ষীপ্ত হয়ে ভিকটিম ইয়াসমিন বেগমের গলায় দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলে ভিকটিম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
রেজাউল তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার এর চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরানো চেষ্টা করে এবং শ্বাস ঠিক আছে বলে অনুধাবন করে। তার কিছুক্ষণ পরে রেজাউল ভিকটিমের গায়ে হাত দিয়ে দেখে স্ত্রীর শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। পরবর্তীতে সে বুজতে পারে তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। চিন্তা ভাবনার একপর্যায়ে ১১ মার্চ ভোর ৫টায় তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের সারা শরীরে তার ঘরে থাকা কেরোসিন তৈল ঢেলে আগুন লাগিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের ন্যায় ফজরের নামাজ পড়তে চলে যায় এবং নামাজ শেষে স্থানীয় লোক জনের আগুন লাগার বিষয়ে কোন আওয়াজ না পাওয়ায় সে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
ইতোমধ্যে রেজাউল কবরস্থানে থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোক জনের মাধ্যমে আগুন লাগার বিষয়ে জানতে পারে এবং অতিদ্রুত তার বাড়িতে গমন করে। স্থানীয়দের আগুন নিভানোর সময় রেজাউল ও তাদের সাথে আগুন নিভানোর ভান করতে থাকে এবং বলতে থাকে ঘরের ভিতর তার স্ত্রী ও তার বিদেশ যাওয়ার সকল কাগজপত্রসহ টাকা পয়সা রয়েছে। বিষয়টি বলতে বলতে রেজাউল জ্ঞান হারানোর ভান ধরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় এবং তার স্ত্রীর জানাজা শেষে হাসপাতাল হতে সে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে দ্রুত দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করে।