লাইফস্টাইল ডেস্কঃ কিডনি মানুষের শরীরের অত্তন্ত গুরুত্বপুর্ন অঙ্গ। আর কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।
মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে। এই কিডনি যদি আপনার শরীরের কাজ না করে তবে আমরা বলে থাকি কিডনি নষ্ট হতে চলেছে। আর কিডনি কাজ না করলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে।
তাই কিডনি ভালো রাখাতে হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আপনার কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আসুন জেনে নেই কিডনি ভালো রাখতে হলে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না-
১. প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
২. মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।
২. গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৩. খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন।
৪. রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৬. কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে ওষুধ খাবেন না।
৭. মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
৮. অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৯. ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি একপর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।
কিডনির পরীক্ষা করান
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
কিডনি সুরক্ষা ও রোগ মুক্ত রাখবে যেসব খাবার
লাল আঙুর
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্লাভনয়েড, যা আপনার কিডনিকে রাখবে সদা তরুণ। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
আপেল
বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।
মাছ
মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা৩ যা কিডনি, হার্ট এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমাতে এর ভূমিকা তো রয়েছেই।
ডিমের সাদা অংশ
আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যে কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেই। কিন্তু আপনি কি জানেন ডিমের সাদা অংশই হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রোটিন, যা আপনার কিডনির জন্য খুবই প্রয়োজন।
ক্যাপসিকাম
আপনার কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ এবং যে কোনো রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিনের প্রধান উপাদান, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।
রসুন
রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। কিডনি রোগীদের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভনয়েড, যা রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনি জনিত উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভমিকা রয়েছে।
বাধাকপি
বাধাকপিকে এন্টিঅক্সিডেন্টের খনি বললেও ভুল হবে না। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে আপনার কিডনিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬, ফলিক এসিড, প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ বাধাকপি রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
ফুলকপি
বাধাকপির মতো ফুলকপিও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। ফুলকপির একটি বিশেষগুণ হলো এটি শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।