বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসে অমর ও কিংবদন্তী একটি নাম মাইকেল জ্যাকসন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মার্কিন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল বিক্রিত অ্যালবামের গায়ক তিনি। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) ‘কিং অব পপ’ নামে খ্যাত এমজের ১৫তম প্রয়াণ দিবস। ২০০৯ সালের এই দিনে ৫০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। সংগীত দুনিয়ার অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়ের ইতি ঘটে এইদিন। সারা পৃথিবীতে শোরগোল পড়ে যায়। ভেঙে পড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। মাইকেল জ্যাকসন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে তার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ গুগলে সার্চ শুরু করে। মাইকেল জ্যাকসন শব্দটি মিলিয়ন মিলিয়ন বার ইনপুট হওয়ায় গুগল কর্তৃপক্ষ ভাবে, তাদের সার্চ ইঞ্জিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যুর দিনে আধঘণ্টা বন্ধ থাকে গুগল। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম।
কিংবদন্তী মাইকেল জ্যাকসনের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান-আমেরিকান একটি পরিবারে। তাঁর ডাকনাম ছিল ওয়াকো জ্যাকো। কিন্তু নামটি খুবই অপছন্দ ছিল জ্যাকসনের। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা জো জ্যাকসন পেশায় ছিলেন ইস্পাত শ্রমিক। তিনি মুষ্টিযোদ্ধাও ছিলেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একটি ব্যান্ডদলে গিটার বাজাতেন। মাইকেলের মা ক্যাথরিন জ্যাকসন বাড়তি উপার্জনের জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। পিয়ানো বাজানো-তেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন ক্যাথরিন। মাত্র চার বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেন মাইকেল জ্যাকসন। ৫ বছর বয়সে প্রথম জনসমক্ষে গান করেন।
১৯৬৪ সালে মাইকেলের ভাইয়েরা একটি ব্যান্ড গঠন করে ‘জ্যাকসন ফাইভ’নামে। এর সদস্য ছিলেন মাইকেলও। প্রায় সাত বছর ব্যান্ডটির হয়ে গান করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘মোটাউন রেকর্ডস’-এর মাধ্যমে একক ক্যারিয়ারে নজর দেন মাইকেল। এখান থেকে বেশ কয়েকটি একক গান প্রকাশ করে সাড়া পান তিনি। অতঃপর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘গট টু বি দেয়ার’।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে সর্বকালের সবচেয়ে সফল সঙ্গীতশিল্পী তিনি। পপসাম্রাজ্যের এই কিংবদন্তি গান, নাচ ও ফ্যাশনে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে মৃত্যুর পরও মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে বিশ্বময় রয়েছে ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল। তাকে নিয়ে চলছে নানা গবেষণাও। মাইকেল জ্যাকসন একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী। মূলত, তার নাচ ও গানের অসাধারণ শৈলী তাকে বিশ্বের শীর্ষ তারকায় পরিণত করে।
জ্যাকসনের গাওয়া পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। সেগুলো হলো ‘অব দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ আজ পর্যন্ত ১১২ মিলিয়নের উপর বিক্রি হয়েছে, যা সর্বোচ্চ বিক্রিত হওয়া অ্যালবাম। সংগীতের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৪ সালে আটটি গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করে রেকর্ড গড়েছিলেন ‘পপ কিং’ মাইকেল জ্যাকসন। এক আসরে এতগুলো গ্র্যামি পুরস্কার ঝুলিতে ভরার রেকর্ড এত বছরেও ভাঙতে পারেননি আর কোনো সংগীতশিল্পী। জীবদ্দশায় মোট ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন জ্যাকসন। তিনিই সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড ও নমিনেশন পাওয়া তারকা। এ জন্য হলিউড ওয়াক অব ফেমে ঠাঁই পেয়েছে তার নামে দুটি তারা। একটি তার নিজের জন্য। আরেকটি জ্যাকসন ফাইভ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে।
দাম্পত্য জীবনে মাইকেল জ্যাকসন ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন বিশ্বের সব রকস্টারের স্বপ্ন নায়ক এলভিস প্রিসলির একমাত্র সন্তান লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করে। কিন্তু অল্প দিনেই ভাঙন আসে এই সুখের সংসারে। ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ৯৭’ সালে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন পপ সম্রাট। পেশায় নার্স এই ভদ্রমহিলার নাম ডোবরা জেনি রো। তারা দু’বছর সংসার করার পর ১৯৯৯ সালে আলাদা হয়ে যান এবং তালাকের সময় দুই সন্তানের প্রতিপালনের দায়িত্ব ডোবরা মাইকেলকে প্রদান করেন। জ্যাকসনের তিন ছেলে-মেয়ে। পুত্র প্রিন্স মাইকেল জন্ম নেয় ১৯৯৭ সালে। মেয়ে ক্যাথরিনা ১৯৯৮ সালে। প্রিন্স মাইকেল টু নামে তার একটি পুত্র আছে যে ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করে।
জীবদ্দশায় নিজের অর্থায়নে লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইন্সটিটিউট স্থাপন করেন মাইকেল জ্যাকসন। এছাড়াও শিশুদের জন্য এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য তিনি কোটি কোটি ডলার দান করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে তার আয়ের অর্থ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। নিজের সকল সৃষ্টি-সৃজনের উজ্জ্বলতায় বিশ্বমানবের কাছে আলোকিত হয়ে থাকবেন কিংবদন্তি মাইকেল জ্যাকসন।
আজ ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৩:০৬ | মঙ্গলবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি