মাশরাফি একজনই, মাশরাফি অতুলনীয়। দলনেতা মাশরাফিকে যেন বিদায় দিতে এসেছিলো পুরো সিলেট।
ঢাকা থেকেও এসেছিলেন অনেক ম্যাশ ভক্ত। তবে যারা মাঠে গিয়ে প্রিয় মাশরাফিকে বিদায় দিতে পারেনি
তাদের আক্ষেপ থেকে যাবে সারাজীবনের জন্য: ইশ! গ্যালারীটা যদি আরেকটু বড় হতো! তাহলে হয়তো
টিকিটটা পেতাম।
ক্রিকেট মাঠে যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যরকম এক যোদ্ধা মাশরাফি। ক্যারিয়ারে ইঞ্জুরিতে পড়েছেন দশের
অধিক সংখ্যক বার। তবুও দেশকে ভালোবেসেই লড়ে গেছেন, লড়েছেন ক্রিকেটকে ভালোবাসেন বলেই।
আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্বের ইতি টানলেন দেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হয়েই।
পরিসংখ্যান ততটা ভারী না হওয়া সত্ত্বেও একজন মাশরাফিকে কেন মানুষ এত ভালোবাসে, ক্রিকেটার থেকে
শুরু করে সবাই। যার বিদায়ের কথা শুনেই সবাই হাজির হয়েছিলো স্টেডিয়ামে। এর কারণের মধ্যে
অধিকাংশ জায়গা জুড়েই থাকবে তাঁর নেতৃত্ব। আর সেই নেতৃত্বও আজ ছেড়ে দিয়েছেন মাশরাফি।
এখন আর মাঠে নামবেন না নেতা মাশরাফি!
বিদায়টাও রাঙ্গিয়ে দিয়েছেন তাঁর সতীর্থরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিনায়ক মাশরাফির অবদানের কথা ভুলে যাননি
মুশফিক-রিয়াদরাও। তাইতো ম্যাচ শেষে সতীর্থরা সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে পরেছেন সামনে ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’ আর
পিছনে মাশরাফি লেখা ২ নাম্বার জার্সি। লিটন-তামিম দুটো সেঞ্চুরির পাশাপাশি উপহার দিলেন আরও অনেক কিছু।
লিটন করলেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত স্কোরের রেকর্ড (১৬টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১৪৩ বলে ১৭৬ রান),
হলেন ১৫০ পার করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের হয়ে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের
পার্টনারশিপও উপহার দিলেন এই দুজন। আর এই দুজনই ছিলেন মাশরাফির প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় সবার
উপরে। লিটন-তামিম দুজনকেই খারাপ সময়ে সাহস জুগিয়েছেন। আর তাইতো লিটন-তামিমও তাঁকে উপহার দিতে
ভুললেন না এমন দৃষ্টিনন্দন শটে সাজানো অসাধারণ ইনিংস। খারাপ সময়ে তামিমের কাধে হাত রেখে ভরসা
জুগিয়েছেন তিনি, তামিমও কাধে করে বিদায় দিলেন নেতা মাশরাফিকে।
আর যারা দেখেছেন তারা তো সাক্ষী হয়ে গেলেন ইতিহাসের। আরও বছর দশেক পরে হয়তো তারা তাদের
প্রিয়জনদের সেই গল্পই শোনাবেন কিভাবে তারা সেই ম্যাচের টিকিটের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন আর কিভাবে
সিলেটের মানুষজন নেতা মাশরাফিকে বিদায় দিয়েছিলো।
অধিনায়ক মাশরাফি মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন, একজন পেসার মাশরাফিও কি মাঠ থেকেই বিদায় নিবেন?
এমন প্রশ্নে দেশের ক্রিকেটের গৌরবময় এক অধ্যায় রচনা করে দিয়ে যাওয়া ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিকের কণ্ঠে পুরোনো
সুর, ‘আশা আছে, এটাতো সবাই চিন্তা করে। তবে আমি আগেও আপনাদের সামনে বলেছি যে এটা আমার খুব বেশি
চিন্তার জায়গা না। অনেকেই বলে মাঠ থেকে বিদায় নিব, কি হবে? মাঠ থেকে বিদায় নিলে কি হয়? শচীন টেন্ডুলকার
এত বড় ক্রিকেটার মাঠ থেকে বিদায় নিল কি হয়েছে? আপনারা হয়তো মনে রাখেন শচীন কীভাবে বিদায় নিল
মাঠ থেকে। এর বেশি কি হয়? বিদায়তো বিদায়ই, সেটা ঘর থেকে নিই আর মাঠ থেকে নিই।’