আজ ২৯ মে, এ গুণী কিংবদন্তি অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এমন একটি দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। বেঁচে থাকলে ৬৮ বছরে পা রাখতেন। জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে অবিরাম ভালোবাসায় দিজিতাল বাংলা নিউজ পরিবার স্মরণ করছে এই বরেণ্য অভিনেতাকে।
এ গুনী অভিনেতার দীর্ঘ কর্মময় বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন ছিল। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। চমকে দিয়েছেন, তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্ত-দর্শকের মন।
হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ২৯ মে, ১৯৫২, নারিন্দা, ঢাকা। বাবা এ টি এম নুরুল ইসলাম ছিলেন জুরী বোর্ডের কর্মকর্তা। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ফরিদীকে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ অসংখ্য জেলায় ঘুরতে হয়েছে। মা বেগম ফরিদা ইসলাম গৃহিনী।
মদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুল পাস দিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলেন। এরপর চলে গেলেন যুদ্ধে। নয় মাসের যুদ্ধ পরে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরলেও ঢাকা ভার্সিটিতে ফেরেননি।
টানা পাঁচ বছর বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে শেষে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনার্সে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। সেখানে ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন ফরীদি। ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হন। জড়িয়ে যান মঞ্চের সঙ্গে।
সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করেন। মঞ্চে তার সু-অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরীদির ঢাকা থিয়েটারের জীবন।
এরপর আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’ ফরিদীর অভিনীত প্রথম টিভি নাটক। যারা দেখেছেন বিটিভি’র ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’ (১৯৮৩) নাটকে সেরাজ তালুকদারের কথা মনে আছে নিশ্চয়। সেলিম আল দীনের রচনা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় এই নাটকে ফরিদীকে দেখা যায় টুপি দাড়িওয়ালা শয়তানের এক জীবন্ত মূর্তি রূপে। ‘আরে আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি, পানি’ কিংবা ‘দুধ দিয়া খাইবা না পানি দিয়া খাইবা বাজান’-এই সংলাপগুলো এখনও মন ছুঁয়ে যায়। সেগুলো নাকি আশির দশকে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।
ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০’র দশকে। ‘দেবযানী’ নামের তার এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে। পরবর্তীতে অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে বিয়ে করলেও ২০০৮ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফাগুনের আগুনে বিষাদের কালো আঁভা ছড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অভিনয়ের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ুন ফরীদি।