আগামীকাল শুক্রবার ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা।
পবিত্র হজের পর বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় এই সমাবেশে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মুসল্লি অংশ গ্রহণ করবেন।
টুঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে তিন দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফার আখেরী মোনাজাত ১২ জানুয়ারি রোববার সকালে অনুষ্ঠিত হবে।
চারদিন বিরতির পর দ্বিতীয় দফায় ইজতেমা ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে এবং আগামী ১৯ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ১৯৬৬ সালে টঙ্গির পাগার এলাকায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে একই বছর দুইবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে ।
গাজীপুর থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, আজ বাদ জোহর থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ ইতোমধ্যে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। তারা রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথ এবং অনেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসছেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বাসসকে জানান ১৬০ একর এলাকা নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও অর্ধ কিলোমিটার প্রস্থ ইজতেমা ময়দান ইতোমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বিশ্বের বিভন্ন মুসলিম দেশের বিপুল সংখ্যক তাবলীগ জামাতের প্রতিনিধি ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে অংশ নিয়েছেন। বিদেশী তাবলীগ জামাতের জন্য আলাদভাবে যে প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, আজ বিকেলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিশ্ব ইজতেমায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ধর্ম সচিব মো. নূরুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মুসল্লিদের সমাগম বেশি হওয়ায় মুসল্লিদের চাপ কমাতে জেলা এবং আঞ্চলিক পর্যায়েও ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বলে ইজতেমা আয়োজকরা জানান।
জাহিদ আহসান রাসেল আরো জানান, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান পৃথক কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। ইজতেমায় আগত দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরাসহ র্যাব ও পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার, ইজতেমায় নিয়োজিত নিরাপত্তায় প্রায় ১২ হাজার সদস্য কাজ করবে। ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ৭০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার সরবরাহসহ ইজতেমা চলাকালে গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমসহ অন্যান্য স্থানে অস্থায়ীভাবে খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌরাস্তা পর্যন্ত দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রাস্তায় পার্কিং করা গাড়িসমূহ অপসারণ, ধূলাবালী নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, রাস্তার দুই পাশে দেয়ালের অশ্লীল পোস্টার অপসারণ ও সিনেমা হলসমূহ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা, বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য কন্ট্রোল রুমের সামনে ৫৪টি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে ২৭টি খিত্তা এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৬টি খিত্তা স্থাপন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করছেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার এক্সস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদাম ঘর ও বিদেশি মেহমান খানা এলাকায় পানিবাহী গাড়ি, ডুবুরী ইউনিট, স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।
ডেসকো’ কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, ইতিমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডা বাতাস, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লী বিশ^ ইজতেমার মাঠের দিকে ছুটছেন। ১৩ জানুয়ারী যোবাযের পন্থীরা মাঠ বুঝিয়ে দিবেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনকে। মাঝে চারদিন বিরতির পর ১৭ জানুয়ারী শুরু হবে বিশ^ ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ। মাওলানা সা’দপন্থীরা অনুরূপভাবে খিত্তাওয়ারি অবস্থান নিবেন।
এদিকে, শহীদ আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল্ল¬ী¬দের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।