আলামিন আলী: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কানসাট রাজবাড়িতে ডাস্টবিন উচ্ছেদ ও রাজবাড়িটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিবগঞ্জ উপজেলার ৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা দিকে বিশ্বাস সেচ্ছাসেবী সংস্থা, শ্যামপুর বন্ধন সাহিত্য সংগঠন ও কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামের আয়োজনে ও কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় কানসাট গোপালনগর মোড় (বলাকা মার্কেটের সামনে) কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামের চেয়ারম্যান মোহা. ইমরান আলীর সভাপতিত্বে মানববন্ধন পরিচালনা হয়। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন, কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কানসাট নিউজ উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা মো. বেনাউল ইসলাম। কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামের সহ-সভাপতি নাদিম হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কানসাট নিউজ পরিষদের উপদেষ্টা মো. তাজেরুল ইসলাম, বিশ্বাস সেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি মো. রজব আলী, সাধারণ সম্পাদক শ্রী পার্থ সাহা, কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামমের সভাপতি এ্যাডভোকেট শাহিনুর রহমান শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রব, শ্যামপুর বন্ধন সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি মো. রায়হান আলী, প্রচার সম্পাদক এইচ.এস হায়দার আহমেদ, কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে আবুল কালাম, শাহাবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে আবুল কালাম আজাদ, কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মো. রানাউল ইসলাম, কানসাট নিউজ পাঠক ফোরামের সদস্য কমরেট ইকবাল মানিক, বিশ্বাস সেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, শ্যামপুর বন্ধন সাহিত্য সংগঠনের সদস্য আজমল হকসহ অন্যরা। বক্তারা, দীর্ঘদিন থেকে কানসাটের এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ী (রাজবাড়ী)টি সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজ বাড়িটি ধ্বংসস্তুপে পরিণিত হওয়ায় কানসাট বাজারের বিভিন্ন হোটেল ও দোকানের ব্যবহারকৃত ময়লা-নর্দমা ফেলার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও বাড়ীটির ছাদ ও দেয়াল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কানসাটবাসীসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ী (রাজবাড়ী)টিতে বিভিন্ন হোটেল ও দোকানের ব্যবহারকৃত ময়লা-নর্দমা ফেলার ডাস্টবিন উচ্ছেদ ও সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান। বক্তারা আরো বলেন, ২০১০ সালের ১৪ জুলাই প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজপ্রাসদটি ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য্য রক্ষাপ্রকল্পে ১৮০০ শতাব্দীর ৯০ দশকে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী কানসাট রাজবাড়িটি সংস্কার করার জন্য তৎকালিন মাননীয় খণিজ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এনামুল হক এমপির ডিওতে ঐতিহ্যবাহী কানসাট রাজবাড়িটি সংস্কারের জন্য আবেদন জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সহকারি সচিব আব্দুল হান্নানের স্বাক্ষরিত সবিম/শাঃ-৬/প্রতœঃ-অধি-১০/২০১০/৫৮৬ নম্বর স্মারকে কানসাট রাজ বাড়িটির সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি গ্যাজেট আকারে পরবর্তী গ্যাজেট প্রকাশের জন্য দুই গ্রস্থ বিজ্ঞপ্তি নির্দেশ দেয়া হলে অধ্যবদি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই অজ্ঞাত কারণটিও তদন্তপূর্বক কানসাট রাজবাড়িটি সংস্কারের জোর দাবি জানান। এছাড়াও প্রাচীনতম ঐতিহ্যমন্ডিত রাজপ্রাসদটি ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য্য রক্ষাকল্পে ১৮০০ শতাব্দীর ৯০ দশকে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী কানসাট রাজবাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি পাঠানো হবে বলেও মানববন্ধনে বক্তারা জানান। উল্লেখ্য, কানসাটের জমিদার বাড়ির বংশের আদি পুরুষরা পূর্বে বগুড়া জেলার কড়ইঝাকইর গ্রামে বসবাস করতেন। তখন সেখানে তাদের উপর দস্যু সর্দার পন্ডিত অত্যাচার শুরু করে দেয়। তার কারণে তারা সেখান থেকে বাধ্য হয়ে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় এসে বসতি স্থাপন করেন। পরে আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট নামক গ্রামে এসে বসতি গড়ে তোলেন। তারপর এখানে তারা জমিদারি প্রথা চালু করেন। তবে কবে তারা জমিদারি চালু করেন তা জানা যায়নি। এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন সূর্যকান্ত, শশীকান্ত ও শীতাংশুকান্ত। এই জমিদাররা ছিলেন মুসলিম বিদ্বেষী। জমিদারদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে তাদের পরিচিতিটা বেশি ছিল। তারা ১৯৪০ সালে মুসলিমদেরকে উচ্ছেদ করার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যার পরীপেক্ষীতে পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। পরে শ্যামপুর চৌধুরী বাড়ির নেতৃত্বে বাজিতপুর গ্রামের ১২টি ইউনিয়েনের মুসলমানরা একসাথে হয়ে এর তীব্র আন্দোলন প্রতিবাদ জানায় এবং জমিদার বাড়ির বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। তার ফল স্বরূপ কানসাটের জমিদার শিতাংশু বাবু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চায়। এইভাবে এই জমিদারদের ইতিহাস মানুষের মনে গেঁথে আছে। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও পতন হয়।