বিগত দুই যুগ ধরে কাগজের ফুল বানিয়ে বিক্রি করছেন নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের জামগ্রাম গ্রামের রেনু বিবি (৫৫)। এ কাজের মাধ্যমে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একই গ্রামের আকলিমা বেওয়া (পঁয়তাল্লিশ) নিকট ফুল বানানো শিখেছেন একই গ্রামের আরো শতাধিক নারী। তারাও কাগজের ফুল বানিয়েই চালাচ্ছেন সংসার।
কাগজের তৈরির কারিগররা জামগ্রাম গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৫৫) বলেন, একই কাজে সম্পৃত্ত কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সোহাগী (আঠারো) এবং তার আরোও দুই মেয়ে এবংস্ত্রী । পরিবারের সবাই এখন কাগজের ফুল বানায়।
কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সোহাগী জানান, এই কাজে গ্রামের শতাধিক মেয়েরা কাগজের ফুল তৈরির কাজ করেন। কাগজ দিয়ে বিভিন্ন আকার ও রঙের বাহারি ফুল তৈরি করে থাকেন। তাদের তৈরি ফুল রাজধানী ঢাকা সহ রাজশাহী, সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্রগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়, সহ বিভিন্ন শহরে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া শহরের বিপণি বিতানেও কাগজের ফুল বিক্রি হয়ে থাকে।
সোহাগী জানান, বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে কাগজের ফুলের ব্যবহার বেড়ে গেছে বর্তমানে প্রতিটি কাগজের ফুল তৈরি করতে নয় থেকে দশ টাকা খরচ হয় এবং তা পাইকারি বিক্রি হয় বারো থেকে চৌদ্দ টাকায়। একজন কারিগর প্রতিদিন তিন শত থেকে পাঁচ শত টি কাগজের ফুল তৈরি করতে পারেন। আমরা কাগজের ফুল তৈরি করে সরাসরি পাইকারের কাছে বিক্রি করে দেই। আমার বাবা শফিকুল ইসলাম সহ পরিবারের সদস্যগন দীর্ঘদিন কাগজের ফুল বানিয়ে সংসার চালাচ্ছি এত আমাদের সংসারের সচ্ছলতা এসেছে। আমাদের পরিবারের সবাই এখন কাগজের ফুল বানানোর কারিগর হয়েছে। কাগজের ফুল বানিয়ে আমাদের পরিবার প্রতিমাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছি, বলেন তিনি।
একই গ্রামের কাগজ ফুলের কারিগর দেলবর বলেন, গত চার বছরে কাগজের ফুল তৈরি করছি। প্রতি মাসে গড়ে নয় থেকে বারো হাজার টাকা আয় করি। বর্তমানে কাগজ ও রং এর দাম বেড়ে যাওয়ায় আয় কিছুটা কম হচ্ছে। আমি নিজেও মাঝে মাঝে কাগজের ফুল খুচরা বিক্রি করি। রাজধানীর চকবাজার এলাকার কাগজের ফুলেরর পাইকারি বিক্রি করে থাকি।
ঢাকা চকবাজারের পাইকার আকরাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাগজের তৈরি ফুলের সরবরাহ পাওয়া গেলেও নওগাঁর আত্রাইয়ের জামগ্রাম এলাকা থেকে বেশি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কাগজের ফুল কেনেন। কাগজের ফুল তৈরি করে দেশের বিপুল সংখ্যক পরিবার সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। এই ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িয়ে গেছেন।
কলেজ পড়ুয়া সোহাগী বেগম সহ একই গ্রামের কাগজের ফুল তৈরির কারিগররা বলেন, এ ব্যবসায় সরকারী ভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে আমার আরো লাভবান হতে পারবো।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি