একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে থাকে যোগ্য কর্মীরা। আর এসকল কর্মীরা একই সঙ্গে পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় চাকরি ছেড়ে দেন। বেশিদিন এক অফিসে কাজ করতে অসমর্থ হন। ফলস্বরূপ চাকরি ছেড়ে দেন।
চলুন আজ জেনে নিই কেন একজন যোগ্য ব্যক্তি চাকরি ছেড়ে দেন, এর নেপথ্যে কী কী কারণ থাকতে পারে।
পেশা বিকাশের সুযোগের অভাবঃ যখন একজন কর্মচারী কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, তখন সে এটা ভেবেই কাজ শুরু করে যে সে অনেক কিছু শিখতে পারবে। তবে সময় যাওয়ার পাশাপাশি যখন ওই কর্মচারী দেখেন কোন ধরণের পদোন্নতি বা সেলারি ইনক্রিমেন্টে স্থবিরতা বা পেশা বিকাশের সুযোগের অভাব দেখা দিচ্ছে, তখন তাঁর চাকরি ছেড়ে দেয়ার একটি কারণ হতে পারে এ বিষয়টি।
অফিস প্রদত্ত পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবঃ একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের কী রূপ মূল্যায়ন করে তার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন হলো অফিস থেকে দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। যেসব প্রতিষ্ঠানে বেতন ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই; সেখানে কর্মীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তখন সে কর্মী অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজের দক্ষতা, প্রচেষ্টা এবং শিল্পের মানদণ্ড অনুযায়ী নতুন চাকরি খুঁজে নেন।
যোগ্য সম্মানের অভাবঃ একটি প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মী যখন নিজের কাজের জায়গাতে যোগ্য সম্মান না পায় তখন সে ব্যক্তি চেষ্টা করে সেখান থেকে সরে অন্যত্র যাওয়ার। অনেক সময় কম যোগ্যতার কর্মীকে অধিক মূল্যায়ন করার কারনে সৎ ও মেধাবী কর্মী ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার উৎসাহ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন।
প্রতিষ্ঠানের দুর্বল নেতৃত্বঃ একটি প্রতিষ্ঠানের যেকোন কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কাজের অভিজ্ঞতা গঠনে নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর প্রতিষ্ঠানের লিডার যদি দুর্বল নেতৃত্ব দেয়, সেক্ষেত্রে অন্য কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। তখন প্রতিষ্ঠানের যোগ্য ব্যক্তি সেখানে কাজ করতে চায় না এবং সে চাকরি ছেড়ে দেয়। কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এমন নেতার প্রয়োজন যার মাধ্যমে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা, প্রতিক্রিয়া এবং সমর্থন পাওয়া যায় এবং যারা বিশ্বাস ও সম্মানের পরিবেশ তৈরি করে থাকে। এটাও হতে পারে কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেয়ার একটি কারন।
মানবিক আচরণের অভাবঃ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয় না। দেখা যায় ছুটি দেয় না, বেশি সময় কাজ করায়, ছুটির দিনেও বাড়িতে কাজ দেয় ইত্যাদি। আর এসব কারণে অনেক কর্মীর ব্যক্তিগত জীবন ব্যাহত হয়। তখন ওই কর্মী চাকরি ছেড়ে দেয়।
ভালো কাজের স্বীকৃতি ও প্রশংসার অভাবঃ ভালো কাজের স্বীকৃতির অভাব খুব বেশি দেখা যায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন কর্মী কাজের উপযুক্ত মূল্যায়ন না পেলে নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবা শুরু করে। আর এ কারণে চাকরির প্রতি সন্তুষ্টি হ্রাস পায় এবং চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ভালো কাজের জন্য প্রশংসা প্রত্যাশা করা একটি মৌলিক মানবিক প্রয়োজন যা একজন কর্মীর অনুপ্রেরণা এবং দক্ষতাকে প্রভাবিত করে। উপযুক্ত স্বীকৃতি এবং পুরষ্কার ছাড়া কর্মী নিজেকে অবমূল্যায়িত এবং গুরুত্বহীন বোধ করতে পারে, যার ফলে চাকরির প্রতি সন্তুষ্টি হ্রাস পায় এবং অনেক সময় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে নেয়।
চাকরির নিরাপত্তার অভাবঃ যখন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরির নিরপত্তা না থাকে সেক্ষেত্রে একজন কর্মী সিকিউর চাকরি খুঁজতে থাকেন। কেননা, আর্থিক অস্থিতিশীলতার সময়ে কর্মীরা তাদের কাজের নিরাপত্তার প্রচন্ড অভাব বোধ করে। আর ছাঁটাইয়ের ভয় তো আছেই। ফলে কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ সবকিছু মিলে সবসময় একজন কর্মী সিকিউর চাকরিতে যোগদান করার চেষ্টা করে থাকে।
কাজের জন্য মোটিভেশনঃ কোন প্রতিষ্ঠানে যে কোনো কাজের জন্য মোটিভেশন গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীদের কাজের স্পৃহা বৃদ্ধির জন্য অফিস পিকনিক, রিক্রিয়েশন সেশন, অফিসে ভালো স্ন্যাকস দেয়া ইত্যাদি ব্যবস্থা করা যায়। এমন অনেকেই আছেন যে অতিরিক্ত কাজের চাপ দেয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেয়।
কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্যহীনতাঃ কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখা সত্যিকার অর্থে একটি কষ্টকর ব্যাপার। আর অনেকেই এখানে তাল মেলাতে না পারার কারনে পিছিয়ে পড়েন। অফিসে অতিরিক্ত কাজ করতে হলে অনেক সময় ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রভাব পড়ে। দুইদিকে সময় দেওয়া তো আর সম্ভব হয় না। তাই অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেকে হিমশিম খেয়ে যান। এর ফলে একটা সময় চাকরিটা ছেড়ে দিতে বাধ্যই হন।
মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির পার্থক্যঃ কোন প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক সংস্কৃতি কর্মীদের প্রভাবিত করে। যদি কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ বা সংস্কৃতির সঙ্গে মতানৈক্য খুঁজে পান, তবে এটি অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর নিয়োগকর্তা এবং কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই অফিসে নিজের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু পেলে অনেক কর্মী চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:৪৪ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/এমআরবি