ভিটামিন ডি-এর বিশেষ সাপ্লিমেন্টেই সারছে করোনা, কমছে শ্বাসকষ্ট, এমনটাই দাবি করছেন স্পেনের বিজ্ঞানীরা। স্পেনের বিজ্ঞানীরা তাঁদের নতুন গবেষণায় দাবি করেছেন, ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট ক্যালসিফেডায়ল (Calcifediol) করোনায় মৃত্যুহার কমাতে পারছে। এই ওষুধের থেরাপিতে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যাও কমছে রোগীর।
এদিকে, ভিটামিন ডি করোনার সংক্রমণ কমাতে পারে কি না সেই নিয়ে নানা মত রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ভিটামিন ডি-এর মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে যে জটিল রোগ হচ্ছে শরীরে তাকে ঠেকাতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে ভিটামিন ডি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট নিলে তার ফল হিতে বিপরীত হতে পারে।
সম্প্রতি এই গবেষণার কথা সামনে এনেছেন স্পেন ও বেলজিয়ামের কেইউ লিউভেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ‘স্টেরয়েড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’ জার্নালে।
গবেষকরা বলছেন, ক্যালসিফেডায়ল হল একধরনের প্রি-হরমোন যা লিভারে তৈরি হয়। এই হরমোন শরীরের প্রদাহ কমাতে পারে, খুব তাড়াতাড়ি রক্তে মিশে যেতে পারে। প্রাকৃতিক উপায় যতটা হরমোন তৈরি হয় তার বাইরেও যদি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যায় বিশেষ করে এই করোনা কালে তাহলে শরীরে ভাইরাসকে ঠেকানোর মতো রোগ প্রতিরোধ তৈরি হবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এর ডোজ নিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে বলে সতর্কও করেছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানী জ়োসে ম্যানুয়েল কুয়েসেডা গোমেজ বলেছেন, লিভারে ভিটামিন ডি৩ হাইড্রক্সিলেশন হয়ে এই হরমোন তৈরি হয়। কিডনিতে ক্যালসিফেডায়লই একটি এনজাইমের সাহায্যে বদলে গিয়ে ক্যালসিট্রিয়ল তৈরি করে যা একধরনের সেকোস্টেরয়েড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ডি৩ থেকে তৈরি ক্যালসিফেডায়লের সাপ্লিমেন্ট নিলে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম থেকে রেহাই পায় রোগী। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (ফুসফুসের জটিল রোগ) বা হাঁপানির রোগীকে এই সাপ্লিমেন্ট খাওয়ালে তার ফুসফুসে কোনও রকম সংক্রমণ বাসা বাঁধে না। পাশাপাশি, তীব্র শ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
ভিটামিন ডি ঘাটতির সঙ্গে সার্স-কভ-২ ভাইরাস সংক্রমণের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কোভিড রোগীদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, দুর্বল শরীর ও ক্রনিক রোগ যাদের আছে, তারাই বেশি আক্রান্ত এই ভাইরাসের সংক্রমণে। রিস্ক ফ্যাক্টর অবশ্য আরও আছে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাকিদের থেকে বেশি। এখন রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে ভিটামিন ডি-এর ভূমিকার কথা কারও অজানা নয়। দেখা গেছে, বেশিরভাগ কোভিড রোগীরই শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে। তবে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিয়ে কোভিড সংক্রমণ কতটা কমানো যাবে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিটামিন ডি যদি শরীরে সঠিক মাত্রায় থাকে, তাহলে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ভিটামিন ডি ডেফিশিয়েন্সি (ভিডিডি)। দেখা গেছে, ৬ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী প্রায় ৭০ শতাংশ মেয়েই ভিডিডি-তে ভোগেন। তাছাড়া ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও মহিলারাও এই রোগের শিকার। তবে করোনা কালে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিলে সেটা কী মাত্রায় নিতে হবে তা রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই বলতে পারবেন অভিজ্ঞ ডাক্তাররা। যদি সংক্রমণ ধরা পড়ে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়াই জরুরি। সুত্রঃ দ্য ওয়াল।