প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে সৃষ্ট সংকটে অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ১০৫ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও মহামারী প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়াতে তিনটি প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হবে বলে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এই ঋণ অনুমোদন দেয়।
আজ শনিবার (২০ জুন) বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান কান্ট্রি ডিরেক্টর মারসি টেম্বন বলেন, করোনায় সৃষ্ট অপ্রত্যাশিত সংকটের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হলো। কারণ করোনা বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। ৩ প্রকল্পে এই অর্থায়ন মানুষকে সহযোগিতা করবে এবং বিনিয়োগ ও অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনীতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল অনট্রাপ্রেনারশিপ’ (প্রাইড) প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, ‘এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকনোমি’ প্রকল্পে ২৯ কোটি ৫ লাখ ডলার ও ও ‘সেকেন্ড প্রোগ্রামেটিক জবস্ ডেভলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫০ কোটি ডলারের প্রাইড প্রকল্পটি প্রায় ২০০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ টানবে; নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্কে সামাজিক ও পরিবেশগত মান জোরদার করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে একলাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে সফটওয়্যার পার্কের ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০ শতাংশ কর্মসংস্থান হবে নারীর।
এই প্রকল্প মিরসরাই-ফেনী অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর -২ এর উন্নয়ন করবে যার মধ্যে থাকবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সড়ক নেটওয়ার্ক, সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন ও জলবায়ু-সহনশীল পানি, স্যানিটেশন ও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক স্থাপন।
প্রকল্পটি জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ঢাকার প্রথম ‘ডিজিটাল অনট্রাপ্রেনার হাব’ গড়ে তুলে এটিকে একটি সবুজ ভবনে পরিণত করবে। তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) ও তথ্য প্রযুক্তি সমর্থিত সেবাসহ (আইটিইএস) স্থানীয় ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পটি কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।
২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রকল্প সরকারের সব সংস্থার জন্য একটি সমন্বিত, অংশীদারিত্বভিত্তিক এবং ক্লাউড-কম্পিউটিং ডিজিটাল প্লাটফর্ম স্থাপন করবে এবং সাইবার নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাবে, যা সরকারি আইটি বিনিয়োগে ২০০ মিলিয়ন ডলারের খরচ বাঁচাবে। এছাড়া ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্লাটফর্ম সরকারকে কার্যকরভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে একলাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে যার এক-তৃতীয়াংশ হবে নারী ও একলাখ তরুণ-তরুণীকে ডিজিটাল ও নতুন প্রতিস্থাপন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। এটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে ৩০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে সহায়তা করবে এবং স্থানীয় আইটি কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে; মহামারির ঝুঁকি কমাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনবে।
আর ২৫ কোটি ডলারের প্রকল্পটি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের স্বল্প-মেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপের সহায়তার জন্য সরকারের আর্থিক সংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও ভবিষ্যতের অভিঘাত মোকাবিলায় শ্রমজীবি ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করবে।
এই অর্থায়ন নারী, যুব জনগোষ্ঠী, অভিবাসী শ্রমিক এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এটা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সহায়তা করবে এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে অধিকতর উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে সহায়তা করবে। এছাড়া এর লক্ষ্য হচ্ছে সম্প্রসারিত একটি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর শক্তিশালী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং বিশেষত মহামারীর সময় শ্রমিকদের ঝুঁকি কমানো।