প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত এক মাসে দেশের তিনটি মহানগরসহ ১৩টি জেলা থেকে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়েছে। ৫০ জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের ২০০ পেজ বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার এই সময়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সে কারণে সামাজিক মাধ্যমকে টার্গেট করে এক মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশের মুখপাত্র ও পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, এক মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে।
যেসব মহানগরে অভিযান চালানো হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর মহানগর। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নওগাঁ, পটুয়াখালী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, নড়াইল, নীলফামারী, পিরোজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অভিযান চালানো হয়েছে।
গুজব ছড়ানোর বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কেউ কেউ করোনার ভুয়া চিকিৎসার কথা ছড়াচ্ছেন। আবার কেউ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির মিথ্যা খবর প্রচার করছেন। ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়—এমন লোকের বিরুদ্ধেও ত্রাণ চুরির গুজব ছড়ানো হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকের নামেও মিথ্যা খবর রটানো হয়েছে। বাড়ি ভাড়া মওকুফ হবে বলে প্রচার করেছে কেউ কেউ।
উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, যাঁরা এসব গুজব ছড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কিছু লোক সত্য–মিথ্যা না জেনেই এসব করেছেন। তবে অনেকে আছেন, সব সময় অভ্যাসবশত এমনটা করে থাকেন। যাঁরা না জেনে করেছেন, এমন ৫০ জনকে গোয়েন্দা দপ্তরে ডেকে এনে বুঝিয়ে–সুজিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ মার্চ ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যুর গুজব ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন এক তরুণ। একপর্যায়ে পোস্টটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নজরে আসে। ৩১ মার্চ রাতে যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে নাইমুর রহমান ওরফে নাইম নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
করোনাভাইরাসে দেশে কারও মৃত্যু হওয়ার আগেই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের দুজন মারা গেছেন’ বলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও কথিত নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়।
এই গুজব দৈনিক খবর, টুইট বাংলা ডটকম ও অন্য আলো নামে তিনটি ফেসবুক পেজ এবং শেখ রানা ও এম এ হাসনাত জামিল নামের দুটি ফেসবুক আইডি থেকে ছাড়ানো হয়। পরে পুলিশ ফেসবুক পেজ ও আইডি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করেছে।