ভারতের সংবিধানে সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা যে বহু দূরের স্বপ্ন, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল করোনা; বম্বে হাইকোর্ট মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন এমনই মন্তব্য করল।
আদালত জানায়, দেশের অর্থব্যবস্থার মূলে আঘাত হেনেছে করোনা সঙ্কট এবং লকডাউন। এই সংকট দেশে পরিযায়ী (যাযাবর বা বসবাসের জন্যে অন্যদেশে গমনকারী) শ্রমিকরা কী করুণ অবস্থায় রয়েছেন, তা সকলের সামনে তুলে ধরেছে। এই পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার কথা কল্পনাই করা যায় না।
ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৩৬০ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৮৮৬ জনের। একা মহারাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৮ জন। আক্রান্তের সংখ্য়ার নিরিখে রাজ্যগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে দিল্লি। দেশের রাজধানীতে এখনও পর্যন্ত মোট ৩৪ হাজার ৬৮৭ জন করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যে যে সমস্ত মানুষ এই প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আক্রান্ত না হয়েও কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এবং সামনে থেকে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ চেয়ে বম্বে আদালতে বেশ কিছু জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ে। তাতে সকলের জন্য যথেষ্ট ডাক্তারি পরীক্ষা, পিপিই সরঞ্জাম, অস্থায়ী ক্লিনিক, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত হেল্পলাইন চালু করার আর্জি জানানো হয়।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি এএ সৈয়দের ডিভিশন বেঞ্চ সেই জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি চলাকালীনই মহারাষ্ট্র সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে।
আদালত বলে, ‘‘সংবিধানে সমানাধিকারের কথা বলা হলেও, তা যে বহু দূরের স্বপ্ন, এই মহামারি পরিস্থিতি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের সবাইকে। এই মহামারি এবং লকডাউন দেশের অর্থনীতির ভিতটাকেই একেবারে নড়বড়ে করে দিয়েছে। দেশে পরিযায়ী শ্রমিকরা কী করুণ অবস্থায় রয়েছেন, তা সকলের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। এমন পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতেও নিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার কথা ভাবা অসম্ভব।’’
এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরো মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন দেশটির হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে মহারাষ্ট্র সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এবং খরচের পরিমাণ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে। হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক বেড রয়েছে কি না, কোভিড আক্রান্ত এবং অন্যান্য রোগীদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎক রয়েছেন কি না, সাধারণ মানুষের কাছে যাতে সব তথ্য পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। রোগী ভর্তি না নেওয়ার জন্য বেড না থাকার অজুহাত দেওয়া চলবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেয় আদালত। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।