প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা। এ অবস্থায় সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে স্নাতক পর্যায়ে অন্তত দুই বছরের সেশনজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, করোনার এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা ছাড়াই পাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একাধিক রাজ্যেও এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশেও শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পরীক্ষা ছাড়াই পাস বা অটো পাস করানো হবে কিনা তা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
তিনি জানান, মহামারী করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা না নিয়ে অটো পাসের চিন্তা-ভাবনা আপাতত সরকারের নেই। করোনার মহামারী শেষে সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললে পিইসি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে সীমিত পরিসরে এবং এরপরে খুললে স্কুলে স্কুলে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তো পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে। পিইসি পরীক্ষা নিতে হলে পাঠদানের যে সময় আছে, সেই সময় তো আর পাচ্ছি না। আমরা যদি সেপ্টেম্বরের দিকে স্কুল খুলে দিতে পারতাম তাহলে শর্ট সিলেবাসে একটা পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা ছিল। এখন যেহেতু সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলতে পারব কিনা আমরা তো বলতে পারছি না।
অক্টোবর কিংবা নভেম্বরের দিকে স্কুল খুললে সরকার তখন কী সিদ্ধান্ত নেবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, আমরা মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছি। তখন হয়তো ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এমসিকিউ করতে পারি।
আর যদি নভেম্বরের মধ্যেও স্কুল খোলা না যায়, তখন কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তখন বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের অটো পাসের কোনো চিন্তা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মহোদয়ের ওখানে মাধ্যমিকের সচিব ও আমাদের সিনিয়র সচিব কথা বলেছেন। আলোচনা করেছেন যে, এই রকম (অটো পাস) কিছু করা যায় কিনা!
জাকির হোসেন বলেন, আমাদের তিনটি পরিকল্পনা আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করব। পরীক্ষা নেয়া হবে না বা হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই, পরীক্ষা আমরা রাখব। এ সময় প্রতিমন্ত্রী অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান।
উল্লেখ্য, জুনের ১ তারিখ থেকে অফিস আদালত খুলে দেয়া হলেও এখনো অনিশ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩৯ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষের দিকে। এ অবস্থায় খুব দ্রুত নিতে হবে সিদ্ধান্ত। সুপারিশগুলোকে শেষ মুহূর্তের যাচাই বাছাই করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, কোন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে কি হবে তার একটা ড্রাফট আমাদের দিয়েছে। সেই মতামতগুলোকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।