শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর। এই কথা আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে বেসরকারী শিক্ষকের জীবন প্রবাহের দিন গুলির কাছে। সমগ্র বিশ্ব আজ করোনার ছোবলে ঘায়েল জর্জরিত।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস ১ম ধরা পড়ে ৮ মার্চ ২০২০এবং ১ম মারা যায় ১৮ মার্চ ২০২০। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, গার্মেন্টস্ গনপরিবহন সাথে সাথে বন্ধ করে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণআনতে সারা দেশ লকডাউনে। মানব দরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনগন ও আই ই ডি সি আর জনগন কে সজাগ করছেন প্রতিনিয় ২৪ ঘন্টার তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে। আইন শৃখলা বাহিনী ও কঠোর অবস্থানে আছে জনগণ কে ঘরে রাখতে।
সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আজ আসহায়। মধ্যবিত্তসহ সকল মানুষ করোনার ছোবলে আজ নিষ্পেসিত। আর যারা দিন আনে দিন খায় তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
এখন স্থবির বিশ্ব, স্থবির বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ভলো নেই কেউ, ভালো নেই জাতি গড়ার কারিগর,শিক্ষক সমাজ। অনলাইন পত্রিকা বা ফেসবুকের স্ট্যাটাস্ দেখে সহজে অনুমেয় শিক্ষক সমাজের অবস্থা। এমনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে জানা গেল খোরশেদ আলম নামে এক অভাবি শিক্ষকের কথা। ঐ শিক্ষক লিখেছেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ” শিক্ষক হিসেবে আমি খুব অসহায়। তাই পুরাতন মোটর সাইকেল নিয়ে ভাড়া চালানোর পথ অবলম্বন করলাম।সারা দেশে লকডাউন চলছে। মাসিক বাজেট যা ছিল তা দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিতে তা অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। দোকানে আর বাকি দিতে চাচ্ছে না। আমি টাকা শোধ করতে পারব কি না তা বিশ্বাস করতে পারছে না। আসলে শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজের পুরাতন বাইকটা নিয়ে পাঠাও কোম্পানির ভাড়া মারব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক শিক্ষকের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, ”আমি হুজরাপুর এলাকার একজন প্রাইভেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক। আমি খাদ্য সামগ্রী চাল, ডাল, তেল, আলু ও লবন পেয়ে এই দিয়ে আজ প্রায় দুই মাস হতে চললো আলু ভর্তা, ডাল সানা দিয়ে ভাত খাচ্ছি। এই ভাবে যে আর কতদিন চলবে আল্লাহই ভালো জানেন। সবকিছু বন্ধ আমরাও কোন বেতন পাইনি। খুব অর্থ সংকটে আছি এদিকে আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ডাক্তারের চেকআপ করাতে পরছিনা। এই অবস্থায় আপনার সরনাপন্ন হলাম যদি কেউ গোপনে কিছু অর্থ সহায়তা করতো তাহলে খুব উপকার পেতাম। মোবাঃ ০১৭৪১৬২২৯৪২।”
বেসরকারী শিক্ষক সমাজ আজ কতটা অসহায় হলে খাবারের জন্য নিজের মোবাইল নাম্বার যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাবহার করে!! তিনি আরেকটি পোস্টে লিখেন- “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার পর থেকে অনেক চিন্তিত। জানিনা আল্লাহ আমাদের কেমন রাখিবেন। যে সকল শিক্ষকরা একাডেমি বা কোচিং বা প্রাইভেট পড়িয়ে সংস্যারের খরচ যোগান। তারা আজ আমার মত অসহায়। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ভালো উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের মতন হাজার শিক্ষক, হাজার বেকার,হাজার প্রাইভেট কোম্পানি আছে, হাজারো কর্মি বিমা তে কাজ করে পরিবারের ভরণ পোষন করে আসছেন। আজ সবাই আমার মতন অসহায়।আল্লাহ সাহায্য কর। কোন পত্রিকা আমাদের টিশনি টিচার দের নিয়ে নিউজ করতেছেন না আর করবেন না আমরা মধ্যবিত্ত। এটাই আমাদের অভিশাপ। আজ কারো কাছে হাত পাত্তে পারতেছিনা।সম্মানের ভয়ে। জানিনা আল্লাহ কপালে কি রেখেছেন। সকল সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী গণের কাছে অনুরোধ আপনারা আমাদের জন্য কলাম লিখুন।”
এই হল লকডাউনে বেসরকারী শিক্ষক সমাজের জীবন চলার বর্তমান চিত্র। তবে এর মধ্যে সুখবর হল করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেই নতুনভাবে ১ হাজার ৬৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকার মধ্যে নিম্ন-মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৩০টি, উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজ) পর্যায়ের ৯২টি, মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৯১টি, স্নাতক (পাস) পর্যায়ের ৫২টি এবং উচ্চ মাধ্যমিক (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) পর্যায়ের ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে কোড দিয়ে আলাদা আদেশ জারি করা হয়েছে। বুধবার (২৯ এপ্রিল) মাউশিতে পাঠানো তালিকায় বলা হয়, বাছাইকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এমপিও নীতিমালা ২০১৮, বিভিন্ন নিয়োগবিধি, সার্কুলার, পরিপত্র ইত্যাদি অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষক কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন বলে আদেশে বলা হয়।
এর আগে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এপ্রিল (২০২০) মাসের এমপিওর চেক ছাড় হয়েছে। বেতন-ভাতা তোলার শেষ দিন ৭ মে পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ওয়েবসাইট (emis.gov.bd) থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের এমপিওর শীট ডাউনলোড করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রাইভেট স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ফেব্রুয়ারীর পর আর বেতনের মুখ দেখেন নি কেউ। বাইরের প্রাইভেট টিউশনিগুলো এখন তারা করতে না পারায় একরকম অভুক্ত অবস্থায় আছে বলা যায়। মধ্যবিত্ত আর যাই করুক কারও কাছে হাত পাততে তো পারে না! ত্রান তারা নিবে কীভাবে? পাবে কীভাবে? ত্রান বরাদ্দ তো সল্প আয়ের মানুষের জন্য!
এছাড়া কলেজগুলোর মালিক পক্ষ নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করতে নারাজ নিজেদের স্বার্থে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল মামুন সরকার বলেন, ‘ছুটি বৃদ্ধিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এবার সত্যি চরম দুর্ভোগে পড়বে!কারণ,কোথাও ত্রাণের জন্য হাত পাতার চেয়ে নীরবে,নিভৃতে মরে যাওয়াও তাঁদের কাছে সম্মানের.. ।’
এ সংবাদটি ২২ এপ্রিল অন লাইন পত্রিকা পূর্বপশ্চিম এ প্রকাশিত হয়েছিল। যে ৩ এপ্রিল ২০২০ বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মাদরাসার অসহায় এ শিক্ষকের মুঠো ফোনের এক ক্ষুদে বার্তা পেয়ে তিনি তার বাড়িতে ডিসি( রেভেনিউ) এর মাধ্যমে চাল ডাল তেল আলু সাবান ও শিশু সন্তানের দুধ কেনা অর্থ পাঠিয়ে দেন ঐ রাত্রে শিক্ষকের বাসায়। শিশু সন্তানের দুধ কেনার অর্থ হাতে পেয়ে শিক্ষক দু হাত তুলে ডিসি মহোদয় কে দোয়া করেন।
তেমনি আরেকটি খবর ৪ এপ্রিল ২০২০ খ্রি বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ পায় এরকম টেকনাফ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক শিক্ষকের ফোন পেয়ে তার কাছে চাল, ডাল, আলু, তেল ও ডিম পৌছিয়ে দিলেন। খাদ্য সামগ্রী পেয়ে শিক্ষক মহা খুশি। তিনি জানালেন তার বাড়ি মাদারীপুর। তিনি বাড়ি যেতে পারেন নি। হোটেল ও বন্ধ। কাছে টাকা যা ছিল তা শেষ। হোটেল বন্ধ। ক্ষুদায় কষ্ট পাচ্ছিলাম তাই নিরুপাশ হয়ে ফোন করি। ফোন পেয়ে মাননীয় ইউএনও মহোদয় আমার কাছে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।
এরকম চিত্র আজ এই সোনার বাংলার অনেক ঘরে ঘরে। বেসরকারী শিক্ষক সমাজ আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন করেন তাদের এই কষ্টের কথা যেন আমরা সাংবাদিকরা পএিকায় প্রকাশ করি। তাদের কষ্টের দিন গুলোর কথা যাতে আমরা সবার মাঝে তুলে ধরি।
তাই আমরা আমাদের নিজ নিজ জায়গা এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ওইসব শিক্ষা গুরুদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। নিজ নিজ এলাকার বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এই দুশ্চিন্তা একটি সুখের স্মৃতি হয়ে যায়। যাদের কাছে আমাদের এই সমাজের সব শ্রেনীর মানুষকে মানুষের মত মানুষ করে প্রতিষ্ঠা করার মূল চাবি কাঠি।যাদের আর্দশে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠে আমাদের শিশু সন্তানরা। তাদের সাহায্যার্থে আজ কেউ কি নেই?