মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া করোনার দাপট এখন সব দেশে। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লাখেরও বেশি মানুষ। দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। নতুন রূপ পাওয়া এই ভাইরাসটি আরও দ্রুত সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। লা জোলা ইনিস্টিটিউট ফর ইমিউনোলোজি এবং করোনাভাইরাস ইমিউনোথেরাপি কনসোর্টিয়াম নামের দুটি সংস্থার বৈশ্বিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষক দলের সদস্য এরিকা ওলমান সাফির বলেন, ‘এটি আরও শক্তিশালী হয়ে মানুষকে সংক্রমিত করছে।’
সেল সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া করোনার জেনিটিক সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে করোনার একটি নির্দিষ্ট সংস্করণ রূপ বদল করেছে। এই পরিবর্তিত ভাইরাসটি অনেক বেশি সাধারণ এবং অন্যগুলোর তুলনায় এটি আরও বেশি সংক্রামক।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করতে তার যে সারফেস প্রোটিন ব্যবহার করে তার মধ্যেই পরিবর্তন ঘটেছে। এখন গবেষকরা দেখছেন ভাইরাসটির এই পরিবর্তিত প্রোটিনকে টিকা প্রতিহত করতে পারবে কিনা। বর্তমানে যে করোনার যে টিকাগুলো ট্রায়ালে আছে সেগুলো ভাইরাসটির পুরোনো সংস্করণের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদন করা হয়েছিল।
করোনার পরিবর্তিত এই সংস্করণটির নাম দিয়েছেন G614। আর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যে সংস্করণটি এতোদিন সংক্রমণ ঘটিয়েছে সেটি D614।
এমন অবস্থায় গবেষণা বলছে, সম্প্রতি যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা এই ভাইরাসের নতুন এক স্ট্রেনে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ভাইরাসটি আবারও নিজের চরিত্র বদল করেছে।
গবেষকদের দাবি, এই ভাইরাসের নতুন যে স্ট্রেনে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, সেটির নাম ‘ডি৬১৪জি’। এই স্ট্রেনটিই হলো ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই দাবি করছেন।
তাঁদের মতে, ভাইরাসের এই রূপটি অনেক ছোট। তবে ভাইরাসের উপরিভাগের ‘স্পাইক’ প্রোটিনগুলোতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে এই ভাইরাস মানুষের শরীরের কোষগুলোতে প্রবেশ করতে পারে খুব সহজেই।
গবেষকরা সারা বিশ্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে জিআইএসঅ্যাআইডি ডাটা বেইস থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ডাটা বেইসটিতে ১০ হাজারেরও বেশি ভাইরাল সিকোয়েন্স ছিল। এগুলো দেখেই গবেষকরা সিদ্ধান্ত নেন সারা বিশ্বে কিভাবে ভাইরাস নিজেকে পরিবর্তন ও মানুষকে সংক্রমিত করে।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. থুশান ডি সিলভা জানান, মহামারি শুরুর পর থেকেই আমরা শেফিল্ডে করোনার স্ট্রেনগুলো নিয়ে সিকোয়েন্সিং করে যাচ্ছি। আমরা দেখেছি, করোনার এই রূপটি প্রচলিত স্ট্রেনগুলো থেকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি, ভাইরাসের এই স্ট্রেনটি সবচেয়ে বেশি মানুষকে আক্রান্ত করলেও শারীরিক অবস্থা গুরুতর হবে না। ডি সিলভা বলেন, এই পর্যায়ে এসে মনে হয় না যে, ভাইরাসের এই স্ট্রেনটি মারাত্মক আকার (শরীরে) ধারণ করবে। সূত্র : মিরর।