সারা বিশ্ব চলমান মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত। এই মহামারির বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থারও ওপর। এ বছর গত ১৮ মার্চের পর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও মানসিক গড়নের ক্ষেত্রে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।
এদিকে বেসরকারী এবং ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংকট আরো বেশী ভয়াবহ। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অন্তত সোয়া কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিল। আকস্মিতভাবেই বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিউশন ফি আদায় হয়নি। আর আয় না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়াও সম্ভব হয়নি। ভাড়া বাড়িতে থাকা এসব স্কুল গুটিয়ে নিয়ে কর্তৃপক্ষ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
অন্যদিকে, কোনো রকম আগাম বার্তা বা নোটিশ না দিয়ে স্কুল উধাও হয়ে যাওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। আসছে জানুয়ারিতে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনেক অভিভাবক সন্তানের টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) আনতে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। স্বল্প বেতনের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেশিরভাগই বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।
তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অবস্থায় তারা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আপাতত: গুটিয়ে নিয়েছেন। এবং পরে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং ক্লাস চলার অনুমতি মিললে নতুন করে চালু করা হবে সেগুলো।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের অন্তত দেড় হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুল না খুললে এ রকম আরও প্রায় ২০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তবে অনেকেই স্কুল বিক্রির নোটিশ দিলেও সেখানে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কিন্ডারগার্টেনের ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেশিরভাগই পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ কেউ ছোটখাটো নানা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আবার কেউ গ্রামে ফিরে গেছেন।
প্রসঙ্গত, কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জি এম কবির রানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আর্থিক অনটনে ইতোমধ্যে হৃদরোগ, আত্মহত্যাসহ নানা কারণে ১৪ জন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। দেড় হাজার স্কুল ভাড়া দিতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা পেশা পরিবর্তন করেছেন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতি মাসেই স্কুল খুলে দেওয়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং নিজ নিজ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানিয়েছেন, যেসব কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বা যারা গ্রামে চলে গেছেন, তারা তাদের সন্তানদের কাছাকাছি সরকারি স্কুলে ছাড়পত্র (টিসি) ছাড়াই ভর্তি করাতে পারবেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সার্কুলার জারি করেছে।