প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, দেশের মানুষ করোনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এটা কিন্তু আত্মঘাতী হচ্ছে। সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। ফুটপাত, রেস্টুরেন্ট, পার্ক সব জায়গায় অনেক লোকজন একসঙ্গে চলাফেরা করছে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা নেই। এর ফলে আমার মনে হচ্ছে, সংক্রমণের ঝুঁকি আসলে বেড়ে যাচ্ছে। ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
প্রবীণ এই চিকিৎসকের মতে, সবার মধ্যে একটা ড্যাম কেয়ার ভাব। সবাই যেন উদাসীন। আমরা যদি গত কয়েক দিনের অবস্থা পর্যালোচনা করি তা হলে দেখবেন অবস্থা একই রকম। আক্রান্তের সংখ্যা ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে উঠানামা করছে। মৃত্যুর হারও কিন্তু তিন থেকে চারের ঘরে অর্থাত্ ৩২, ৩৪ বা ৪০-এর কিছু ওপরে নিচে উঠানামা করছে। ফলে কমেনি। সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েক দিনের মধ্যে বোঝা যাবে। মনে হচ্ছে বাড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণটা হলো ঈদের মধ্যে অনেক মানুষ গ্রামে গেছেন আবার ফিরে এসেছেন। কোরবানির হাটে তো প্রচুর মানুষ গেছেন। শারীরিক দূরত্ব বা সামাজিক দূরত্ব একেবারেই মানেনি। স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানেন না। অনেকে মাস্কও পরে না। হাটে-বাজারে বিনা কারণে ঘোরাফেরা করেন।
অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, জনগণের মধ্যে সহনশীলতা এসে গেছে। মানুষ করোনাকে পাত্তাই দেয় না। ভয় পায় না। আসলে জনগণই এটা মানছে না। অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার চেয়ে আসলে বলা যায়, মানুষই খুলে নিছে। কারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা দরকার। এইসব কারণে মানুষ এগুলো মানছে না। অনেকেই মনে করছে, করোনা হয়তো কোনোদিন যাবে না। এর সঙ্গেই সামঞ্জস্য রেখে জীবন-জীবিকার স্বার্থে এভাবেই চলতে হবে। লকডাউন যখন প্রথম দেওয়া হয় তখন কিছুদিন মানুষ এটা মানছে, এরপর আর মানেনি। রেড, ইয়োলো বা গ্রিনজোন এগুলোও মানুষ মানেনি। মানুষকে আসলে কতদিন বন্দি করে রাখা হয়। আসলে এটা কবে যাবে আমরা তো জানি না। আদৌ কোনোদিন যাবে কি-না কেউ জানে না। ডব্লিউএইচও তো বলছে, করোনা হয়তো কোনোদিনও যাবে না। অন্য অনেকগুলো ভাইরাস যেমন আছে, এটাও হয়তো থেকে যাবে।
আসলে রোগটা তো নতুন। সারা পৃথিবীতে কেউই জানত না। এই রোগ সম্পর্কে আমাদের ভালো আইডিয়াও ছিল না। পৃথিবীর কোনো দেশই তো ভালোভাবে পারেনি। যদিও তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোনো সুযোগ নেই। তার পরও বলতে পারি, তুলনামূলক সংক্রমণের হার আমাদের এখনো কম, মৃত্যুর হারও কম।
আপনার জীবনই যদি না বাঁচে তাহলে কার জন্য কাজ করবেন। আমাদের দেশে অনেক লোককে দেখেছি, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশেও আমি দেখেছি যারা মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছে, আমরা তো করোনা বুঝি না, আমরা তো না খেয়ে মরছি। বিশেষ করে যারা নিম্ন আয়ের লোক তারা বলে, এটা আমাদের রোগ না, এটা বড়লোকের রোগ। ফলে জনগণের বিশাল একটা অংশ এ ব্যাপারে উদাসীন। তাদের জন্য পেট বাঁচানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
সবশেষে তিনি বলেন, এখনো সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। হাত ধুতে হবে। কাজ করার পাশাপাশি সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। তা না হলে বিপদ বাড়তে পারে।ইত্তেফাক