মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভূমি অফিস। এ যেন চিরাচরিত গল্পের ভিন্ন রূপ। সেবা গ্রহীতা নিজে উপস্থিত হয়ে তার সমস্যা জানাতেই সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। সকল শ্রেণী-পেশার লোকজনকে এই অফিসে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ভূমি অফিস এখন দুর্নীতি ও দালালমুক্ত এবং হয়রানিবিহীনভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যতিক্রমী কাজ সম্ভব হয়েছে বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তারের ঐকান্তিক ও নিরলস চেষ্টার ফলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন পেশার লোকেরা সরাসরি এসে কমলগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস থেকে স্বল্পতম সময়ে কোন প্রকার মাধ্যম ও জটিলতা ছাড়া সেবা গ্রহণ করেছেন। কমলগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক ইফতেহার আহমদ রাজু বলেন, আমার একাধিক নামজারী ছিল। কোন রকম তদবির ছাড়াই এগুলো যথাসময়ে পেয়ে যাই। এখন ভূমি অফিসের সকলেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে, যা আগে দেখিনি।
এ উপজেলার শমশেরনগর বাজারের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন আহমদ মুহিত বলেন, ‘বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) একজন সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তি। আমার ২২ বছর পূর্বের ক্রয়কৃত একটি বাসার জায়গার বিষয়ে উনি নিজে দাঁড়িয়ে সরকারী সার্ভেয়ার এনে ম্যাপ দেখে মেপে যে রায় দিয়েছেন তা ছিল যুগান্তকারী।
একই এলাকার আব্দুল মছব্বির একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আকমল মাহমুদ বলেন, ‘আমার একটি নামজারী ছিল। খুব সহজেই নামজারীটি হয়ে যায়। ভূমি অফিসের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।’
এদিকে সাংবাদিক কামরুল হাসান মারুফ বলেন, আমার ৩টি নামজারী ছিল। আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে পরিচয় না দিয়ে নামজারি আবেদন শুনানীতে অংশ গ্রহণ করি। অতি অল্প সময়ে নামজারীগুলো হয়ে গেছে। বর্তমানে অফিসের সকল কাজের স্বচ্ছতা লক্ষ্যণীয়। এমন অনেককে দেখেছি প্রত্যন্ত গ্রামের সাদামাটা সাধারণ মানুষটিও কত সহজে সঠিক কাগজপত্র দেখিয়ে নামজারি থেকে শুরু করে সকল সেবা নিয়ে যাচ্ছেন। আর এসবই হচ্ছে সহকারী কমিশনারের সততা, ঐকান্তিক ও নিরলস চেষ্টায়।
বর্তমানে নতুন উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণে নিয়মিত তদারকিসহ সহকারী কমিশনারের উদ্যোগে নির্মাণাধীন অফিসের পাশে পুকুর খনন করা হয় যা জেলা প্রশাসক উদ্বোধন করেন। গত মাসে পুকুরটিতে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়।
এছাড়া সহকারী কমিশনারের বিশেষ অভিযানে জবর দখলকৃত শতাধিক একর সরকারী জমি উদ্ধার করেন উপজেলায় কাজে যোগদানের ১৬ মাসের এই স্বল্প সময়ে মধ্যে।
কমলগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ভূমি অফিস দুর্নীতি, দালালমুক্ত ও হয়রানিবিহীন সেবা পাওয়ার যা বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে সহকারী কমিশনার ও অফিস ষ্টাফদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় এটা সম্ভব হয়েছে। এলাকাবাসী বর্তমান সময়ে ভূমি অফিস প্রদত্ত সেবায় অত্যন্ত খুশি। তাদের প্রত্যাশা এভাবেই যেন সবসময় ভূমি অফিস থেকে সেবা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘অফিসে জরুরি কাজে আসা ভুক্তভোগী জনসাধারণের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত, ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে আমি নিজেই এসব উদ্যোগ নিয়েছি। এখন কাঙ্খিত সেবা পেয়ে স্থানীয় লোকজন অনেক খুশি হচ্ছেন। সাধারণ লোকজনকে আমি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই। কারণ তাদের জন্য হয়তো কেউ আমাকে ফোন দিয়ে বলবে না তার কাজটা করে দিতে। তবে সকল সেবা গ্রহিতাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করি সবাইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে ও সহজতর উপায়ে সকল সেবা প্রদানের। আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের চেষ্টা করছি আগামীতে করে যাবার আপ্রান চেষ্টা থাকবে।