চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামে শনিবার (১ জুন) রাতে মৃত নবজাতক কে কবর দেওয়ার সময় হঠাৎ কেঁদে উঠে। আসলে নবজাতকটি মৃত ছিলো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, শনিবার সকালে নবজাতকের বাবা মীরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে ইউনুস আলী। তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার পেটে ব্যথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন আয়েশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, বাচ্চা ভালো আছে। তবে রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দুর্বলতা কাটাতে গ্লুকোজ স্যালাইন দেন। এরপর তার পেট ব্যথা আরও বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আলট্রা করার পর চিকিৎসক জানান, বাচ্চা মারা গেছেন। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী ৯টার দিকে একটি কার্টনে করে বাড়িতে নেওয়া হয় নবজাতকের ‘মরদেহ’। নেওয়া হচ্ছিল কবর দেওয়ার প্রস্তুতি। এমন সময় কার্টন খুলতেই কান্না শুরু করে নবজাতক। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় নবজাতককে।
নবজাতকের বাবা ইউনুস আলী জানান, শনিবার ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা, বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। কেঁদে ওঠার পর দ্রুত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চিকিৎসাধীন। তবে শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না।
শিশুটির বাবা ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সকালে বাচ্চা সুস্থ আছেন বলে জানান ডাক্তার শারমিন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন, বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়। পরে ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে মিঠাছরা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনি বিশেষজ্ঞ শারমিন আয়েশার মোবাইলে গনমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসেন। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায় আমরা বলতে পারবো না।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেবো, রেজিস্টারে এন্ট্রি করবো।
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:৩৭ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি