ডিবিএন ডেস্কঃ বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গতকাল সোমবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। প্রায় দুই মাস ধরে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক। তার চিকিৎসা চলছিল বাসাতেই। তাছাড়া বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি তার হার্টে সমস্যা ও ডায়াবেটিস ছিল।
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে হাসান আজিজুল হক ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা শেষে ২০০৪ সালে অবসরে যান। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চৌদ্দপা আবাসিক এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন।
ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য ও মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। গল্প, উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, নাটক, শিশুসাহিত্য, স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী রচনায়ও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), রোদে যাবো (১৯৯৫), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭) তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ। এছাড়া- আগুনপাখি (২০০৬), সাবিত্রী উপাখ্যান (২০১৩), শামুক (২০১৫) এবং বৃত্তায়ন (১৯৯১) তার আলোচিত উপন্যাস।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক এবং ২০১৯ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।