হাবিবুল ইসলাম হাবিব::
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রত্যেকদিন পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি নামক ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নির্ধারণ করায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট এর ভূমিকা পালন করছে।
অন্যান্য মাদকের তুলনাই আজকাল মাদক মানেই ইয়াবা আর ইয়াবা মানেই মাদকে রুপান্তর হয়েছে। মরণনেশা এই বিভিন্ন রংয়ের ইয়াবা বড়ি যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা সীমান্ত-মায়ানমার মংডু সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় মাদকের ভয়াবহ মানচিত্র আকেঁ উভয় পাড়ের রাঘব বোয়ালরা।
কয়েকবছর পূর্বে সারা বাংলাদেশের যেকোন স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ মানেই আলোচিত একটি ঘটনা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি টেকনাফ উপজেলার আনাচে-কানাচে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মাদক কারবারিদের মধ্যে নিত্যদিন গোলাগুলি বিনিময়ের মতো ঘটনা যেন রং খেলায় পরিণত হয়েছে। একদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় প্রতিনিয়ত মাদক পাচারকারী অথবা মাদক কারবারিদের সাথে প্রতিনিয়ত একজন দুইজন তিনজন করে নিহত হলেও কিছুতেই থামছে না এই নিষিদ্ধ মাদক কারবার। বরং লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা বড়ি নদী/সাগর পথে টেকনাফে আসছে। প্রশ্ন এখানেই, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যদি মাদক বন্ধের কারণ হয় প্রতিনিয়ত মাদক আসছে কিভাবে? আর যদি বন্দুকযুদ্ধে মাদক বন্ধের কারণ না হয়, তাহলে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা বেমানান।
এতে সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ মানেই ফুটে উঠেছে টেকনাফের ঘটনা। কিন্তু বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের অনুসারীরা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে মাদক কারবারের যে মানচিত্র বিস্তার করে ফেলেছে এ বোঝার দায় নেবে কে! স্থানীয় সচেতন মহলের দাবির সাথে সাথে বাস্তবে সকাল-সন্ধ্যায় মাদকসহ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোনো না কোনো সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদক, অস্ত্রসহ প্রশাসনের হাতে আটক হওয়া যেন এক নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার তথা উখিয়া-টেকনাফ পরিচিতি লাভ করলেও সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক কারবারিদের সাথে যে বন্দুকযুদ্ধের মতো ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে, পর্যটকদেরও আগের মতো আর দেখা যায় না। এর দায় স্বীকার কিংবা দায় বহন করবে কে!
সকাল থেকে পরদিন ভোর সকাল পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী কিংবা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ মাদক পাওয়া যায় তা কিভাবে সম্ভব? মাদক ও মাদক কারবারি ধরতে প্রশাসন যেমন তৎপর, রোহিঙ্গাদের তৎপরতা তার চেয়েও বেশি। স্থানীয় যুবকদের লোভ দেখিয়ে আশ্রয় নিতেও তারা ভুল করছে না। এতে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক কারবার বন্ধ করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা!
কক্সবাজার জেলায় কর্মরত র্যাব সদস্য, পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা তথা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। টেকনাফ বিজিবি কর্মান্ডার লে. কর্ণেল ফায়সাল খানঁ। আপনারা এই শতাব্দির শ্রেষ্ঠ জীবিত কিংবদন্তী।
আপনারা ভীনগ্রহ থেকে ছুটে আসা বাংলাদেশে মাদকে ডুবে যাওয়া সুড়ঙ্গের শেষ আলো। গ্রীক বীর হারকিউলিসের চেয়েও শক্তিশালী ও সাহসী। আপনারা রুপকথার শেষ যুবরাজ।
প্রতিটি মাদককারবারি রাঘব বোয়ালের পশ্চাদ্দেশে আগুন জ্বালানোর নেপথ্যের নায়ককে খুঁজতে গেলেই আপনাদের নাম দেখা যায়, আপনারা ওয়ান ম্যান অফিসার।
টেকনাফ ২ বিজিবি (সিও) লে. কর্ণেল ফয়সাল খানঁ বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ’র মতো ঘটনা মাদক বন্ধের কারণ হতে পারে না। সচেতনতাবোধ অর্জন করতে হবে, এবং স্বদেশ প্রেমে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।কক্সবাজারবাসীর সচেতন মহলের দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক কারবার বন্ধ সম্ভব নয়। মাদকের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতিটি স্থানে মাদক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে, এবং পর্যাপ্ত বর্ডার গার্ডের দায়িত্ব বাড়ালে এতেই সম্ভব মাদকের আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে সোনার কক্সবাজার গড়তে।