ডিবিএন ডেস্কঃ বিশ্বে চলমান মহামারীর নাম করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। সম্ভাব্য অতিসংক্রামক এই ধরন শনাক্তের খবরের জেরে গতকাল শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রীতিমতো ধস নেমেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বড় বড় শেয়ারবাজারগুলোতে সূচকের পতন হয়েছে মোটা দাগে। এদিন তেলের বাজারও ছিল নিম্নমুখী।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুসারে, শুক্রবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। মার্কিন তেলের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দর ১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৮ দশমিক ১৫ ডলার। আর আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১২ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৭২ দশমিক ৭২ ডলারে। ২০২০ সালের এপ্রিল, অর্থাৎ করোনা মহামারির প্রথমদিকে রেকর্ড ধসের পর বিশ্ববাজারে তেলের দামের এটিই সবচেয়ে বড় অবনমন।
এর মাত্র কয়েকদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ সমন্বিতভাবে স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) বা কৌশলগত মজুত থেকে বিপুল পরিমাণ তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু যে আশা করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। বিশ্ববাজারে এর প্রভাব পড়ে একেবারেই সামান্য। তবে করোনার নতুন ধরনের ছড়ানোর খবর সামনে আসতেই কমতে শুরু করে জ্বালানি তেলের দাম।
শুধু তেলের বাজারই নয়, ওমিক্রনের ধাক্কায় অস্থির হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজারও। রয়টার্সের খবর অনুসারে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের সূচক কমেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালের অক্টোবরের পর থেকে তাদের সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি। এদিন ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোর সময় কেটেছে বিগত ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।
শুক্রবার ইউরোপীয় বেঞ্চমার্ক স্টক্স ৬০০’র লেনদেন শেষে হয়েছে সূচকে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ পতনের মাধ্যমে, যা ২০২০ সালের জুনের পর থেকে সর্বনিম্ন।
সবচেয়ে বেশি বিপদ যাচ্ছে এয়ারলাইন ও ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর। শুক্রবার ক্রুজ পরিচালনাকারী কার্নিভাল করপোরেশন, রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজেস ও নরওয়েজিয়ান ক্রুজ লাইনের শেয়ারের দম কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। ইউনাইডেট এয়ারলাইনস, ডেল্টা এয়ারলাইন ও আমেরিকান এয়ারলাইনসের অবস্থাও ছিল প্রায় একই।
এদিকে, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা জানিয়েছে, করোনার অন্য সংক্রামক ধরনগুলোর তুলনায় নতুনটিতে পুনঃআক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সংস্থাটির উপদেষ্টা প্যানেলের এক জরুরি বৈঠকে করোনার বি.১.১৫২৯ ধরনের একটি নামও দেওয়া হয়েছে। গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে নতুন ধরনটির নাম রাখা হয়েছে ওমিক্রন। প্রচলিত টিকা এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর, এখন সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ওমিক্রন ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ইসরায়েল এবং হংকংয়ে এর দেখা মিলেছে। নতুন ধরন শনাক্তের খবর ছড়ানোর পরপরই বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আগামী সোমবার (২৯ নভেম্বর) থেকে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।