ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া কুস্তি উৎসব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা বিরল বটে। প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের নাগপঞ্চমীতে কুস্তি উৎসব করে থাকেন বিভিন্ন সময়ে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে থেকে বাংলাদেশে আসা মানুষেরা।
মাথার ওপর রোদ-বৃষ্টির আনাগোনা। তবু খেলা দেখতে হবে, শামিল হতে হবে কুস্তি এর আনন্দ উৎসব দেখতে হবে এক ঝলক। এমনি আমেজে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগানে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী কুস্তি উৎসব।
সোমবার (২১ আগস্ট) বিকেলে শত শত দর্শকের উপস্থিতিতে উৎসবের উদ্বোধন করেন বাগানের পণ্ডিত বিপ্লব উপদ্ধ্যায় বাগানের উপরলাইন এবং নিচুলাইন নামক দুই স্থানে চলে এই কুস্তি খেলা। সূর্য ডুবার আগ পর্যন্ত চলে এই উৎসব।
জানা যায়, ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার রাজ্যে যারা বসবাস করতো তারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসে বাস করা শুরু করে। তারা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য শত বছর ধরে এই কুস্তি উৎসব পালন করে আসছে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের নাগপঞ্চমীতে কুস্তি উৎসবের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই কুস্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এইদিনটিকে ঘিরে সারাদিন গ্রামের সবার ঘরে ঘরে ভালো রান্না হয়ে থাকে, খাওয়া দাওয়া করে কুস্তির জন্য সমাবেত হয়। এই কুস্তিকে জয় পাবার জন্য মাস খানেক আগ থেকেই নিজের শরিরের যত্ন নিতে শুরু করেন কুস্তিবাজ খেলোয়াড়রা।
দর্শকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লড়াই ছাপিয়ে বন্ধুত্ব ছড়ায় এই কুস্তি। সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন কেটাগরিতে ভাগ করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়ে থাকে এই কুস্তি খেলায়।
কুস্তিগিররা জানান, এতো দর্শকের ভিড়ে নিজের হার দেখা অনেক খারাপ লাগা কাজ করে। তারা আরও জানান, মর্দাঙ্গি দেখানো পুরো বছরে একবারই সুযোগ পাওয়া যায়। সেইটাতে সবাই বিজয়ী হতে চায়।
আর যে এই কুস্তিতে জয়ী হয় সে আগামী ১ বছরের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী কুস্তিগির নির্বাচিত হয়ে থাকে।
বিজয়ী কুস্তিবিদরা জানান, আজকের দিনটার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করি। আজ আমরা যারা জয়ী হয়েছি সবাই অনেক খুশি এবং ভালো লাগছে।
এছাড়াও কুস্তিতে বিজয়ী শ্রীকান্ত প্রজাতির বলেন, আমি কুস্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছি। এই দিনের জন্য আমি অনেক আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে থাকি, এইটা সব সময় আমার জন্য স্পেশাল। বিজয়ী হয়ে অনেক ভালো লাগছে।
কুস্তি প্রেমী সৌরভ রায় বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত অলিম্পিকে এই কুস্তি খেলে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় তারাও এই রকম বিভিন্ন গ্রামের উৎসব থেকেই উঠে এসেছে।
কুস্তি খেলা দেখতে আসা দর্শকরা জানান, যদি বাংলাদেশ সরকার এর কোনো ভালো পদক্ষেপ নেয় তাহলে এখান থেকে ভবিষ্যতে ভালো কুস্তিগির বের হতে পারে এবং তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য, কুস্তি ছাড়াও লং জাম্প, হাই জাম্পসহ ভার উত্তোলন খেলাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি