সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলীর ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল বুধবার দুপুর থেকে হেলিকপ্টারে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি।
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
আইনজীবী তাপস পাল বলেন, শুনানিতে আসামিদের কোনো বক্তব্য জানতে চাননি বিচারক।
হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। এরপর তাদের হেলমেট সরিয়ে নেওয়া হয়। তারা কাঠগড়ায় অন্য আসামিদের পেছনে দাঁড়ালে রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরকে কাঠগড়ায় সামনে আসতে বলেন।
শুনানিতে অতিরিক্ত পিপি তাপস বলেন, আসামি শিমুল ভুঁইয়ার ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফয়সাল মুস্তাফিজের নাম আসে। ফয়সাল রুমালে ক্লোরোফরম মিশিয়ে আনারের নাক চেপে ধরে। মোস্তাফিজসহ অন্যরা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
বিচারক রাষ্ট্রপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন, রিমান্ড দরকার কেন?
উত্তর আসে- হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, ছুরিসহ আরো আলামত উদ্ধার, হত্যার মোটিভ, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কে কে তা জানার জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
অতিরিক্ত পিপি তাপস বলেন, “আসামিরা চুল কেটে তাদের চেহারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছে। হিন্দু পরিচয় নিয়ে কালীমন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা কারা যুক্ত আছে তা জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।”
এর আগে রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঘটনার একমাস পেরোলেও আনারকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো অস্পষ্ট ঠেকছে পুলিশের কাছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “তাকে কী উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে, এটা এখনো পরিষ্কার নয়। টাকা লেনদেনসহ যেসব বিষয় শোনা যাচ্ছে- সব বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি।”
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এ মামলাতেই ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে রিমান্ডে পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এর আগে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
আর ঘটনার পরপরই ধরা পড়া শিমুল ভুইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুইঁয়া ও শিলাস্তি রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।
আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
আনার হত্যার হোতা শাহীন ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বৃহস্পতিবার বলেন, “তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কালকাতা পুলিশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে।”
কলকাতায় আনার হত্যার অভিযোগে সেখানে হত্যা মামলা হয়েছে। সেখানকার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম