মাইক্রোপ্লাস্টিক যে মস্তিষ্কের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অঙ্গেও প্রবেশ করছে, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলছে। মানব ফুসফুস, প্লাসেন্টা, জননাঙ্গ, লিভার, কিডনি, হাঁটু ও কনুইয়ের জয়েন্ট, রক্তনালি ও অস্থিমজ্জায় (বোন ম্যারো) প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি মিলেছে বিভিন্ন গবেষণায়।
তুরস্কের চুকুরোভা ইউনিভার্সিটির মাইক্রোপ্লাস্টিক গবেষক সেদাত গুনদগদু বলেন, এই পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলাকে ‘বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা গুরুত্বপূর্ণ’।
৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসবিশিষ্ট প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত এই অতিক্ষুদ্র কণার পরিমাণ বাড়ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মস্তিষ্কের নমুনাতেও আশঙ্কাজনক পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অভ হেলথ কর্তৃক অনলাইনে প্রকাশিত গবেষণাটির ফলাফল এখনও রিভিউ করা হচ্ছে।
ময়নাতদন্ত করা মানবদেহের লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে সবগুলোতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলেছে। তবে ৯১টি মস্তিষ্কের নমুনায় অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে গড়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
এ ফল দেখে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেছেন বলে জানান গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া বিজ্ঞানী ম্যাথিউ ক্যাম্পেন।
গবেষকরা দেখেন, ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে সংগ্রহ করা ২৪টি মস্তিষ্কের নমুনায় ওজনের ০.৫ শতাংশ প্লাস্টিক রয়েছে।
ক্যাম্পেন বলেন, ‘বিষয়টি রীতিমতো আতঙ্কজনক। আমার কল্পনার চেয়েও বেশি প্লাস্টিক রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কে।’
তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা টিস্যুগুলোর মধ্যে মস্তিষ্কেই সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ওই গবেষণায় আলঝেইমারসসহ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১২ জনের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে, এসব মস্তিষ্কে সুস্থ মস্তিষ্কের নমুনার চেয়ে ১০ গুণ বেশি প্লাস্টিক দূষণ হয়েছে।
ক্যাম্পেনদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মস্তিষ্কে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক মিলেছে, ২০২৪ সালে পাওয়া গেছে তারচেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ মানব মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
অন্যান্য আরও অনেক গবেষণায় অন্য প্রাণীপ্রজাতির মস্তিষ্কেও অবশ্য মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক গবেষণায় জানা গেছে, বেইজিংয়ে ৪৫ রোগীর ওপর চালানো পরীক্ষায় তাদের হাঁটুতেও মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কী কী হতে পারে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়তে পারে, যার ফলে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফুলে যেতে পারে। এর জেরে পরবর্তীতে কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে।
এছাড়া প্রাণীর ওপর একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি উর্বরতা সমস্যা, নানা ধরনের ক্যানসার, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম