দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের এক বছর পার হলেও লোহাগাড়া রেলস্টেশনে থামছে না কোনো ট্রেন। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কেন অবহেলার শিকার হলেন তারা–সেই প্রশ্ন লোহাগাড়াবাসীর। দ্রুত লোহাগাড়া স্টেশনে ট্রেন থামানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ৮টি স্টেশনে ট্রেন থেমে যাত্রী ওঠানামা করলেও লোহাগাড়া, হারবাং ও ইসলামাবাদ স্টেশনে থামছে না ট্রেন।
তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মকর্তা মো. রাসেল জামান জানান, লোহাগাড়া রেলস্টেশনের স্ট্রাকচারাল কাজ ইতোমধ্যে শেষে হয়ে গেছে। শুধু কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। তা’ও আগামী মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও ঈদ স্পেশাল নামে তিন জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। এর মধ্যে পর্যটক ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ননস্টপ চলাচল করে। ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ষোলশহর, জানালী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থেমে কক্সবাজার রেলস্টেশনে গিয়ে যাত্রা শেষ করে। কিন্তু লোহাগাড়ায় স্টেশন থাকলেও সেখানে ট্রেন থামে না। তাই, এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত ভাড়া ও যানজটসহ নানা ভোগান্তি নিয়ে সড়কপথে যাতায়াত করতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে উপজেলার আধুনগর খাঁন হাট বাজার ও চুনতি ইউনিয়নের হাজী বাস্তার মাথা এলাকা থেকে লোহাগাড়া রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার দুটি রাস্তা রয়েছে। উভয় দিকে অভ্যন্তরীণ সড়কের কাজ অর্ধেক করে থেমে আছে। মহাসড়ক থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রতিটি সড়কের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। বিকেলে সময় কাটাতে ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশ-পাশের এলাকার অনেককে রেলস্টেশনে আসতে দেখা যায়। স্টেশনের অবকাঠামোগত কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও কেন এই স্টেশনে ট্রেন থামছে না–তা নিয়ে এলাকাবাসীর অনেক প্রশ্ন। স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিপুল যাত্রী থাকলেও এই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলছে মাত্র ২ জোড়া ট্রেন। এই রুটে চলা ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ বিরতিহীন হওয়ায় সুফল পাচ্ছেন না দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা। ঈদ স্পেশাল লোকাল ট্রেন হলেও স্টেশনে না থামায় বঞ্চিত উপজেলাবাসী।
উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা আলীআহমদ জানান, ‘কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হওয়ায় লোহাগাড়ার মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত ও আশান্বিত ছিল। প্রতিদিন বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে দেখি, শুধু চেয়ে থাকি। ট্রেনে চড়ার সুযোগ হয়নি। কারণ লোহাগাড়া রেলস্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। লোহাগাড়ার আগে সাতকানিয়া ও পরে চকরিয়া স্টেশনে ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি থামলেও, লোহাগাড়ায় কেন থামে না তা বুঝতে পারছি না।’
লোহাগাড়ার স্থানীয় আধুনগর ইউনিয়নের (ইউপি) সাবেক সদস্য শিবু রঞ্জন পাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সরু হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা লেগেই আছে। রেল লাইন চালু হওয়ার পর লোহাগাড়ার মানুষ মনে করেছিল সড়ক পথের ভোগান্তি আর তাদের পোহাতে হবে না। কিন্তু দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালুর এক বছর অতিবাহিত হলেও লোহাগাড়া রেলস্টেশনে থামছে না কোনো ট্রেন। লোহাগাড়াবাসী রেলপথের সুফল থেকে বঞ্চিত।’ দ্রুত লোহাগাড়া স্টেশনে ট্রেন থামানোর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেন মূলত ঈদের আগে-পরে কয়েকদিন চালানোর কথা ছিল। কিন্তু যাত্রী চাহিদার কারণে সেটি আর বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় কোনো কারণে হয়তো লোহাগাড়া রেলস্টেশনে ট্রেন না থামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যেহেতু ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি নিয়মিত চলাচল করছে, সেহেতু আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে ওই ট্রেন লোহাগাড়া স্টেশনে থামার জন্য প্রয়োজনীপেয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে আরও নতুন ট্রেন যুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। সেগুলোও লোহাগাড়া রেলস্টেশনে থেমে যাত্রী ওঠানামা করবে। খুব তারাতারি লোহাগাড়া স্টেশনে ট্রেন থামবে আশ্বাস দেন রেলের এই ককর্মকর্তা।
আজ ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | ১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:৫৮ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি