জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে গেছে। বাক্যগুলো এতটাই তিক্ত ছিল যে, শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কোনো অভিযোগ জমা না দিয়ে চলে যান। আলোচনায় সিইসি ও ড. কামাল, দুজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। এ পর্যায়ে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সচিব সিইসিকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সভা বর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটনার ইতি ঘটান। সিইসি, কমিশনার বা কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও তাঁদের আটকানোর কোনো চেষ্টা করেননি। এর আগে ড. কামাল যতবার ইসিতে গিয়েছিলেন, প্রতিবারই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজ মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনার পর তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তাঁর বদলে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা। এ বিষয়ে আজ বিকেলে সিইসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সচিবকে প্রশ্ন করেন। সচিবকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন সারা দেশে তাঁদের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে অভিযোগ জমা দিতে। একই সঙ্গে তাঁরা চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। এই চার কর্মকর্তা হলেন—কেরানীগঞ্জের একজন সাব-ইন্সপেক্টর, ঢাকার ডিবি পুলিশের একজন ওসি এবং কুমিল্লার মুরাদনগর ও নাঙ্গলকোট থানার ওসি। বৈঠকে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মোহসীন মন্টু তাঁদের প্রচারে হামলার বিবরণ দেন। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। একপর্যায়ে সিইসি জানতে চান, কোথায় পুলিশ বাধা দিচ্ছে? পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে? তিনি তাঁকে সেখানে নিয়ে যেতে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বলেন। এ সময় তিনি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসাও করেন। এর জবাবে ড. কামাল সিইসির উদ্দেশে বলেন, ‘সিইসি বিচারকের ভূমিকায় থাকবেন। বিচারক সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। তিনি ডাকলে সাক্ষীরা তাঁর কাছে হাজির হবেন। অথচ আপনি তা না করে পুলিশের পক্ষ নিচ্ছেন।’ ড. কামালের এই কথায় বৈঠকে উত্তাপ ছড়ায়। একপর্যায়ে ড. কামাল হোসেন সিইসির উদ্দেশে হাতজোড় করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা দিয়ে গেছেন। তাকে আপনি রক্ষা করেন। আপনি ৩/৪ দিনের মধ্যে কিছু একটা করেন।’ মির্জা আব্বাস সিইসির উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কারও কাছে অভিযোগ নিয়ে যাই না। অন্যরাই আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে। আমি সালিস করি। আজ আমি নিজেই আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছি, কিছু একটা করেন।’ আব্দুল মঈন খান বলেন,‘ আমি তো কাউকে কিছু বলি না। ভদ্রলোকের মতো নির্বাচন করতে এসেছি। কিন্তু আমার সামনে আমার সেকেন্ডম্যানকে মেরে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিয়েছে। বয়সের কারণে প্রতিরোধও করতে পারিনি।’ বৈঠক শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিইসি কামাল হোসেনকে অ্যাটাক করে কথা বলেছেন। সিইসি আউটবার্স্ট করেছেন। পুলিশকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে হি ওয়াজ রিয়েলি অ্যাগ্রেসিভ। কামাল হোসেনকে বলেছেন, “আপনি নিজেকে কী মনে করেন?” কামাল হোসেনকে অ্যাটাক করায় আমরা খুব আপসেট।’ সূত্র : প্রথম আলো