তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ঈদে ঘুরা হয়নি গত দুই বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের বিধিনিষেধের জন্য। এই দীর্ঘ সময় পর ভিন্ন আমেজে চলছে এবছর ঈদের প্রস্তুতি। মহামারি নেই, নেই বাঁধা বিধিনিষেধ। তাই অনেকেই চাচ্ছেন একটু ঘুরতে বের হবেন। সত্যি যদি তাই হয় তবে আর দেরি নয়। এখনই প্রস্তুতি নেন। চলতি ঈদে ঘুরে যান দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। এখানের অন্তত ৫০ টি পর্যটন কেন্দ্র গেলেই দু’চোখ ভড়ে মনোরম দৃশ্য, নিতে পারবেন মন খোলে বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস যার পর আনন্দ আর আনন্দ।
এখানের সব চেয়ে আকর্ষণীয় স্পট মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার মাঝামাঝি মাধবকুণ্ডে পাথরিয়া পাহাড় থেকে নেমে এসেছে জলরাশি। এখানের অবিরাম ঝর্ণাধারা যে কাউকে বিমোহিত করে। আছে উঁচু নিচু টিলা আর দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষরাজি।
দেশের যেকোনো স্থান থেকে মৌলভীবাজার জেলা সদর ও কুলাউড়া থেকে সহজে এখানে যাওয়া যায়। আর থাকা খাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গলের ফাইভ স্টার ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ’সহ ও মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া পৌর এলাকায় এলাকায় রয়েছে অনেক টু ত্রি ও ফাইভ স্টার হোটেল।
এখানের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আরেক আকর্ষণীয় স্পট । কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাঝামাঝি ভানুগাছ রিজার্ভ ফরেস্টে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১ শ ৭১ কিলোমিটার দূরের এই বনে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুনে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। লাউয়াছড়ায় ৪ শ’ ৬০ প্রজাতির জীব বৈচিত্র্য রয়েছে। ২শ’ ৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই ক’বছরে বন বিভাগ ১ শ’ ৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এই বনে অবমুক্ত করেছে ।
মাধকুণ্ডের পর আরেক দর্শনীয় স্পট ‘ হাম হাম জলপ্রপাত’। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে এই স্পটে গেলে আর ফিরে আসতে মন চাইবে না। এখানের ঝর্ণাধারা অবারিত । তবে অতি বয়স্ক এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই স্পটে যাওয়ার বেলায় কিছু ঝুঁকি রয়েছে। স্পট পর্যন্ত যেতে ৩-৪ কিলোমিটার এলাকা পায়ে হেঁটে যেতে হয় । অতিরিক্ত গরম থাকায় বয়স্ক ও রোগাক্রান্তদের জন্য স্পট পর্যন্ত যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ।
হাকালুকি হাওরের পালের মোরা নামক স্থানে দাঁড়িয়ে সহজে হাওড়ের বড় অংশ দেখা যাবে।এছাড়া ডিঙি ও ইঞ্জিনের নৌকায় হাওর ঘুরে দেখা যেতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ‘কালা পাহাড়’ আর ইস্পাহানী টি কোম্পানির গাজীপুর চা বাগানে অবস্থিত গগণ টিলা তারো সুন্দর স্পষ্ট। সেখানে একবার উঠলে আর নামার ইচ্ছে হবে না।বিশেষ করে চারদিকে শুধু সবুজের সমাহার। পাশাপাশি আপনার কাছে মনে হবে পৃথিবীটা শুধু বৃক্ষরাজি । ঘরবাড়ি ও জনবসতির অবস্থিত খুঁজে পাবেন না।
মাধবপুর লেকের অবস্থান কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে। এই জায়গাটা জেলার অন্যতম সুন্দর একটি এলাকা। এখানের বিশাল লেক আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।
শমসেরনগর বিমান ঘাঁটি। কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বাজারের পাশে এই বিমান ঘাঁটির রানওয়ে এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় ছিলো। এছাড়া আছে বিমান বাহিনীর সার্ভাভাইভাল স্কুল এবং রিকরুট ট্রেনিং সেন্টার। রয়েছে আমা কাঁটাল লিচু পেয়ারা আনারস ও লেবুর বিশাল বিশাল বাগান। অসংখ্য নার্সারি। এখানের ফুল ফল ও ঔষধি গাছের চারা নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন প্রতিদিন ভিড় জমায়। যা দেখলে যে কারো দুই নয় জড়িয়ে যায়।
এছাড়া কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার সিআরপি গেস্ট হাউস। এখানে রয়েছে সিরাজ নগর চা বাগান। পড়ন্ত বিকেলে এখানে ছবি তুলে যে কেউ আনন্দে পায়। আছে মৌলভীবাজার টু কুলাউড়া এবং শ্রীমঙ্গল -শমসেরনগর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়ক আর গাছগাছালি।
এমনকি কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে রয়েছে অর্ধশতাধিক আদিবাসী পল্লী। যেখানে গাছে গাছে পান । অনেক সুপারি গাছের চূড়ায় উঠেছে অনেক পানগাছ। এখানের খাসিয়া গারো মারমা মনিপুরী জনগোষ্ঠী এবং তাদের আলাদা কৃষ্টি কালচার, ভাষা ও সংস্কৃতি অনেক আনন্দদায়ক।
এছাড়া মৌলভীবাজারে আছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বধ্যভূমি, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ। সাতগাঁও পাহাড়, লাঠিটিলা কমলা লেবুর বাগান, চাতলাপুর স্থল বন্দরসহ অর্ধশতাধিক আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট।
আর থাকা খাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফসহ অসংখ্য টু ত্রি ও ফাইব স্টার হোটেল ও রিসোর্ট।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন ) হাসান মোহাম্মদ রিকাবদার এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদক’কে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাফেরায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। এছাড়া যানজট মোকাবেলায় শ্রীমঙ্গল থেকে বড়লেখা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটি যেন নির্বিঘ্নে জনসাধারণ চলাচল করে আনন্দে কাটাতে পারে সে লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত।