দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। চলমান দাবদাহে স্বস্তি পেতে সহজেই মিলছে না বৃষ্টি। অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ, পশুপাখি, বৃক্ষ সব কিছুই হাঁপিয়ে উঠেছে। বৈশাখের প্রচণ্ড খরতাপে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ খাল ও পুকুরের পানি। একটু বৃষ্টির জন্য সর্বত্রই চলছে হাহাকার। এইরকম অনুকূল কঠিন পরিস্থিতিতে কী করবে মানুষ? শিখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)। তিনি এ গরমের প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টি প্রার্থনা করতে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। আর সে নামাজের নামই সালাতুল ইস্তিসকা। যখন বৃষ্টির প্রবল প্রয়োজন হয় তখন সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করা মুস্তাহাব।
ইস্তিসকার নামাজ কাকে বলে?
ইস্তিসকা এর অর্থ পানি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টিতে খুব বেশি কষ্ট হলে সব মুসল্লিদের নিয়ে একত্রে খোলা মাঠে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়। আর এ প্রার্থনা করাকেই ইস্তিসকার নামাজ বলে। আলেমদের মতে, এ নামাজ মাঠে গিয়ে আদায় করার আগে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক একাধারে তিন দিন রোজা রাখবে। তারপর সংশ্লিষ্ট ওই এলাকার ইমাম বা খতিব সাহেব মুসল্লিদের নিয়ে বসবেন, নসিহত করবেন, উপদেশ দেবেন। তিন দিনের রোজা শেষে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে মাঠে গিয়ে নামাজ আদায় করবেন। মাঠে যাওয়ার আগে এবং পরে সবাই তওবা করবেন। তওবা করলে বৃষ্টি বর্ষণের খুবই সম্ভাবনা থাকে।
ইস্তিসকার নামাজের ইতিহাসঃ একবার যখন দীর্ঘকাল ধরে অনাবৃষ্টি চলছিল তখন একজন ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা:) এর কাছে আসেন। সেসময় তিনি মসজিদে নববীতে জুম’আর নামাজের খুতবা প্রদান করছিলেন। ওই ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা:) কে বৃষ্টিপাতের জন্য প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেন। কারণ মানুষ, ক্ষেত-খামার, গবাদি পশু এবং বাগান পানির অভাবে ভুগছিল। ওই ব্যক্তির এমন কথার জবাবে মুহাম্মাদ (সা:) দোয়ার জন্য নিজের হাত তুলেছিলেন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যাতে বৃষ্টি হয়। আর এরপরই তার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয় এবং মুষলধারে বৃষ্টি পুরো দিন ধরে চলেছিল। তখন মুহাম্মাদ (সা:) আবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং বৃষ্টিপাত বন্ধ করার জন্য দোয়া করেছিলেন। কারণ সেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষতি হচ্ছিল। এরকম আরেকটি উপলক্ষ্যে মুহাম্মাদ (সা:) দিনের আলোতে মসজিদ থেকে বের হয়ে পূর্ববর্তীদের সাহাবিদের সাথে একটি সমতল ভূমিতে গিয়েছিলেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তারপর সূরা ফাতিহার সাথে জামায়াতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। নামাজে জুম’আর নামাজেের মত কেরাত জোরে পাঠ করেছিলেন।
ইস্তিসকার নামাজ কীভাবে পড়তে হয়?
ইস্তিসকার নামাজের বর্ণনাঃ ১। ইস্তিসকার নামাজ দুই রাকাত। আযান ইকামতবিহীন প্রকাশ্য কিরাআতে উক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।
২। মুসল্লি প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবীর দেবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ বার তাকবীর দেবে।
৩। প্রত্যেক তাকবীরের সময় হাত উঠাবে এবং তাকবীরগুলোর মাঝে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়বে।
৪। নামাজের পর ইমাম খুতবা দিবেন। খুতবায় বেশী বেশী ইস্তেগফার ও কুরআন তিলাওয়াত করবেন। অতঃপর দু হাত উঠিয়ে মিনতির সঙ্গে দুআ করবেন এবং হাদীসে বর্ণিত যেসব দুআগুলো আছে তা বেশী পড়বেন।
ইস্তিসকার নামাজের আহকামসমূহঃ ১। ইস্তিসকার নামাজের পূর্বে ওয়াজ নসীহত করা, মানুষের হৃদয় গলে এমন কথা বার্তা বলা, যেমন গুনাহ থেকে তাওবা করার গুরুত্ব তুলে ধরা। জুলুম অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নেয়া সম্পদ তার হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা; কেননা মানুষের পাপ-গুনাহের কারণেই বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেয়া হয়। আর তাওবা ইস্তিগফার ও তাকওয়া অর্জন, দুআ কবুল হওয়া এবং খায়ের ও বরকত লাভের কারণ। অনুরূপভাবে মানুষদের এ উপলক্ষে দান খয়রাতের ব্যাপারেও উৎসাহ দেয়া; কেননা দান খয়রাত আল্লাহর রহমত আকৃষ্ট করার কারণ।
২। ইস্তিসকার নামাজের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দিন ঠিক করা, যাতে মানুষ ওই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। এ নামাজে খুশু-খুজু, বিনয়- নম্রতার সাথে গমন করা সুন্নত। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই যে বান্দার সকল হাজত-প্রয়োজন পূরণ করেন এ মনোভাবও অন্তরে জাগ্রত রাখা উচিত। ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তিসকার নামাজের জন্য বের হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনাড়ম্বরভাবে, বিনয়-নম্রতা ও আকুতিসহ বের হয়ে নামাজের মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। (আবু দাউদ শরীফ)।
৩। ইস্তিসকার খুতবায় হাত উঠিয়ে বেশি বেশি দুআ ও ইস্তিগফার করা।
উল্লেখ্য, ইস্তিসকার নামাজের পর বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টিপাতের শুরুতে বৃষ্টিতে নামা ও ভেজা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে, আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকা অবস্থায় আমাদের বৃষ্টি পেয়ে বসল। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাপড় গুটালেন। তিনি বৃষ্টিতে ভিজলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এমন করলেন কেন? তিনি বললেন, কেননা এ বৃষ্টি তার রবের পক্ষ থেকে নতুন এসেছে।
আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৪৯ | মঙ্গলবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান (বাপ্পি)