ইউনিপে-টু-ইউ’র জালিয়াতি
চট্টগ্রামের ছেলে রনি ২০১০ সালে ইউনিপে-টু-ইউ নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং
কোম্পানিতে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বেশি লাভের আশায়।
প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। ইউনিপে-টু-ইউ’র তরফ থেকে তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যত বিনিয়োগ করবে তাকে তত বেশি মুনাফা দেয়া হবে। সে আশায় তিনি আরো টাকা বিনিয়োগ করেন।
এই বিষয়ে রনি বলেন , ” প্রথমে আমি যখন ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি তখন আমাকে ২০ থেকে ৩০ পার্সেন্ট পর্যন্ত লাভ দিয়েছিল। আর গত ছ-মাস অবধি তারা আমাকে ঠিক মতো টাকা দিছে। তাই বিশ্বাস করে শেষে এসে আমি আরও এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করি।”
এক দশক আগের বিতর্কিত মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার নামে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জনগণের থেকে এই ইউনিপে-টু-ইউ। প্রতারণার অভিযোগে ২০১০ সালে ইউনিপে-টু-ইউ’র কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার।
ইউনিপে-টু-ইউ তে যারা টাকা দিয়েছেন তারা সেই টাকা আজও ফেরত পাননি। রনিও সে টাকা ফেরত পাবার আশা করেন না আর।
ডেসটিনির জালিয়াতি
ইউনিপে-টু-ইউর মতোই প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ডেসটিনি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
মানুষের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলায় ডেসটিনির শীর্ষ ব্যক্তিরা এখন কারাগারে।
আর এরই সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুরু হয়েছে ই-কর্মাসের নামে নানা প্রতারণা। ই-ভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জ এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে উঠেছে প্রতারণার অভিযোগ।
বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব জানিয়েছেন যে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছেন, গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবার কোন পরিকল্পনা তার নেই।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও, যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরতের উপায় কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক নাজমা বেগম এব্যাপারে বলছেন, এসব অনিয়ম ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রথম থেকে ব্যবস্থা না নিলে মানুষের টাকা ফিরে পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠে।
“টাকা হান্ড্রেট পার্সেন্ট ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না, কোনভাবেই সম্ভব না। যখন ব্যাপারটা ঘটে যায় তখন কিছু করার থাকে না,” বলেন নাজমা বেগম। মূলত টাকা ফেরত পাওয়া ‘অসম্ভব’।
তিনি আরও বলেন, এসব কোম্পানির মূলত সম্পদের চেয়ে দেনার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সেজন্য তাদের টাকা ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতাও নেই।
“আপনি তাদের ধরলেন, শাস্তি দিলেন। কিন্তু যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না।”
এই বিষয়ে কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
“গ্রাহকদের টাকার কী হবে” এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেউই পরিষ্কার করে কোন কিছু বলতে পারছেন না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন এসব ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সে ব্যাপারে তাদের কোন দায় নেই। এজন্য অভিযুক্তদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ইভ্যালির বিরুদ্ধে যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, তাই গ্রাহক ও পাওনাদারদের টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সরকার কী ধরণের ভূমিকা রাখবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারেন না। কারণ এই রকম ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। তাই অনেক আগেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর এই বিষয়ে নজর দেয়া উচিত ছিল বটে।