আমরা কমবেশি সবাই জানি সুনামগঞ্জ, সিলেট- কুড়িগ্রামে বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। চারদিকে কেবল পানি আর পানি। এ বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়েছে ঘর-বাড়ী, তলিয়ে গেছে ফসলি মাঠ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সিলেটের বন্যার ছবি ভাইরাল হয়েছে সেকারণে কোটি কোটি টাকার ত্রান পাচ্ছে তারা। অথচ কুড়িগ্রাম জেলায় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনে পরিবর্তন হচ্ছে মানচিত্র। বিশ্বাস করেন, সিলেটের বন্যা দেখে আমি একটু বিচলিত হয়নি, আমি কুড়িগ্রামের সন্তান। আমরা কুড়িগ্রাম বাসী প্রতি বছরেই ২/৩ বার এরকম চুবানি খেয়ে অভ্যস্ত, যা এখনো চলমান।
দানবীর ভাইয়েরা, শুধুমাত্র সিলেটে না, পারলে কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত এলাকা গুলো একবার ঘুরে আসুন। আমাদের মঙ্গা পিড়ীত এলাকার মানুষজন এই বন্যায় কত অমানবিক জীবন-যাপন করছে তা দেখে আসুন । বাংলাদেশে লন্ডন নামে পরিচিত সিলেট শহরের অধিকাংশ বাড়ী দুইতলা বা তার উপরের। আবার যাদের দালান বাড়ী নেই তারা আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিচ্ছেন। চলাচল করছেন নৌকায়। কিন্তু কুড়িগ্রামের বন্যার চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন। এখানে অনেকের মাথা গোজার একমাত্র তাদের বাড়ীর চাল পর্যন্ত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে নৌকায়। পানির কারণে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও বন্ধ। খাবার পানির বড়ই অভাব। সব নলকূপই পানির নিচে এবং পুকুরসমূহ ময়লা পানিতে ভরাট। রান্না করে খাবার তৈরির সুযোগ কোথাও নেই। শুকনো রুটি, বিস্কুট, মুড়ি আর চিড়া খেয়েই জীবন চালাতে হচ্ছে।
বন্যার কারণে যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। এসব ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। কিন্তু এখন প্রয়োজন বন্যাদুর্গত মানুষদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। তারা যেন আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। বন্যার সময় সার্বিকভাবেই মানুষের জীবনে কষ্ট নেমে আসে। আবার বন্যার পানি নেমে যাবার পর ও অনেকদিন ধরে বন্যা কবলিত মানুষদেরকে সেই কষ্ট সহ্য করতে হয়। কারণ তখন মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয় প্রবলভাবে। পুকুরসমূহ ময়লা পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ব্যবহারের পানিরও সংকট চলে। মানুষ ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় বন্যার্ত মানুষদেরকে সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আসুন আমরা বন্যাদুর্গত মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সারা দেশের সার্মথ্যবান মানুষেরা যদি আজ এগিয়ে আসে তাহলে এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করা কঠিন এবং অসম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে এসব দুর্গত মানুষেরা অচিরেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে, একথা আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি। আসুন দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছে দিই শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ। বন্যার কারণে যে মানুষটি আজ সর্বহারা তার প্রতি আসুন আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। বন্যার কারণে যে মানুষটির ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে আসুন মাথা গোজার ঠাঁই করে দিই। যে কৃষকের ফসল ধ্বংস হয়েছে আসুন নতুন করে কৃষিকাজের জন্য সেই কৃষকের পাশে দাঁড়াই। যারা গবাদিপশুকে হারিয়েছে, তাদের হাতে আবারো গবাদি পশু তুলে দিই। ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি এবং মৎস্য চাষিদেরকে আবারো নতুন করে ব্যবসা শুরুর জন্য সহযোগিতা করতে হবে। যে ছাত্রটির বই খাতা নষ্ট হয়েছে সেই ছাত্রটির হাতে আসুন আমরা আবারো বই খাতা কলম তুলে দিই।যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা যদি আমরা দুর্গতদের সাহায্যে দান করি, তাহলে খুব সহজেই বিশাল একটি ত্রাণ তহবিল গড়ে ওঠবে। আর এই তহবিলকে যথাযথ ব্যবহার করে এইসব দুর্গত মানুষকে আবারো সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। তাই এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আজ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরকে ও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষের উপকার করার এখনই সময়।
সামনেই পবিত্র ঈদুল আজহা। সার্মথ্যবান মুসলমানরা ঈদুল আজহার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এই কোরবানির প্রধান উদ্দেশ্য এবং মর্মবাণী হচ্ছে ‘ত্যাগ’ করা। আর তাই কোরবানির উদ্দেশ্যে জবাইকৃত পশুর মাংসের তিন ভাগের দুই ভাগই ফকির, মিসকিন এবং গরিব আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয়। সামর্থ্যবান মানুষেরা অনেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অনেক বড় বড় গরু কোরবানি দিয়ে থাকেন। অনেকে লাখ টাকা পর্যন্ত একটি গরু কেনার পিছনে ব্যয় করে থাকেন। অনেকে আবার একাধিক গরু কোরবানি দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার বিদেশি পশু যেমন উট দিয়েও কোরবানি দিয়ে থাকেন। এবারের কোরবানির জন্য বরাদ্দ টাকার কিছু অংশ যদি আমরা দুর্গতদের পুর্নবাসনে ব্যয় করি এবং বাকি টাকা দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে একটি পশু কিনে কোরবানি দিই তাহলে তাতে কোরবানিও আদায় হবে এবং দুর্গতদেরও কল্যাণ হবে। মনে রাখা দরকার, স্বয়ং স্রষ্টাই মানুষকে মানবতার কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে যে অর্থ আমরা পাব তার একটি অংশও দুর্গতদের পুর্নবাসনে ব্যয় করতে পারি।
সুতরাং আজ এসব বিষয় আমাদের ভাবা উচিত। সিলেটে আপনারা যেভাবে এগিয়ে আসছেন, নিশ্চয় অত্যন্ত মানবিক কাজ। কিন্তু কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত এলাকার যে দরিদ্র মানুষ গুলো এই বন্যায় অমানবিক জীবন-যাপন করছে, পারলে তাদের দিকেও দয়া করে সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসুন।
সাকিব আল হাসান রুবেল
গণমাধ্যম কর্মী, রৌমারী- কুড়িগ্রাম।
[বি.দ্রঃ মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না ও এর জন্য সম্পাদক কোনভাবে দায়ী নন। ]