আশুরার রোজার দ্বারা বিগত এক বছরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য রসুলুল্লাহ (স) নির্দেশ দিয়েছেন।
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহরম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)। হজরত আয়েশা (রা) বলেন, জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা পালন করত। রসুলুল্লাহ (স)ও সেকালে রোজা পালন করতেন। মদিনায় এসেও তিনি রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও নির্দেশ দেন। রমজানের রোজার আদেশ নাজিল হলে আশুরার রোজা শিথিল করা হয়। এখন কেউ চাইলে তা পালন করুক, আর চাইলে তা বর্জন করুক। (বুখারি ১/২৬৮)
বিশ্বনবি (স) বলেছেন, রমজানের রোজার পর মহরম মাসের রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়। (বুখারি ১১৬৩; মুসলিম ১৯৮২) নবি করিম (স) আশুরার দিন নিজে রোজা রাখতেন এবং সেদিন রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি ২০০৪; মুসলিম ১১৩০)। ১০ মহরম আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহতায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। (সহিহ মুসলিম ১১৬২)
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রা.) হজরত ইবনে আব্বাস (রা) এর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যাতে হজরত রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। তবে এতে যেন ইহুদিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হয়ে যায়। সেজন্য এর সঙ্গে মিলিয়ে হয় আগের দিন কিংবা পরের দিনসহ রোজা পালন কর। (তিরমিজি ৭৫৫)।
আশুরার রোজার বিধান প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহরম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরুহ নয়; বরং এতে মুস্তাহাব বিঘ্নিত হবে। প্রকৃত সুন্নাত হলো, আগের ৯ মহরম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহরম মিলিয়ে মোট দুই দিন রোজা রাখা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, তোমরা মহরমের নবম ও দশম দিবসে রোজা রাখ। (তিরমিজি ৭৫৫) অন্য হাদিসে নবি করিম (স) বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে মহরম মাসের নয় তারিখের রোজাও পালন করব। (মুসলিম ১১৩৪)। তবে যে এ আশুরার দিন রোজা রাখতে পারল না, তার জন্য কোনো সমস্যা কিংবা আশাহত হওয়ার কিছু নেই। যদি কেউ ৯, ১০ এবং ১১ তারিখ মোট তিন দিন রোজা রাখেন তবে তা সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এ মত উল্লেখ করেছেন।
লেখক :মুহাদ্দিস, ইসলামি চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক
সূত্র : ইত্তেফাক